একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের শরিকরা এখনই আসন বন্টনের নিশ্চয়তা চায়
সংবাদচর্চা ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টনের দাবিতে এখনই ব্যস্ত সময় পার করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগেই বিষয়টি ‘ফয়সালা’র আশ্বাস দিলেও অন্য শরিকরা তাতে আস্থা পাচ্ছে না। মূলত গত দুই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাদের অনাস্থা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। নির্বাচন এগিয়ে আসায় এই অনাস্থা জোটের ঐক্যে কিছুটা হলেও সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট নেতারা।
মহাজোটের শরিক সব দলই আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকাও তৈরি করে ফেলেছে। কয়েকটি দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ শেষও করে ফেলেছে। বেশিরভাগ দলই নিজস্ব প্রার্থী তালিকার পাশাপাশি দরকষাকষির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাও করে রেখেছে। জয়লাভের সম্ভাবনা বিবেচনায় এনেই এসব তালিকা করা হচ্ছে বলে দাবি শরিক দলগুলোর নেতাদের। সব মিলিয়ে ১৪ দলের শরিকরা আগামী নির্বাচনে ৯০ থেকে ১০০টি আসনের নিশ্চয়তা চাইছে প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগের কাছে। গত নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে মাত্র ১৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আগামী নির্বাচনে অন্তত ১৫টি আসনে জোটের মনোনয়নের নিশ্চয়তা চাইছে। তবে দলের পক্ষে ৩০টি আসনের দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। দলের সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনসহ বর্তমান সংসদের নির্বাচিত দলীয় ছয় এমপির আসন তাদের প্রত্যাশায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
একইভাবে জাসদ (ইনু) সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনসহ ১৫টি আসন চাইছে দলটি। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের মাদারীপুর-৩ অথবা অন্য যেকোনো আসন এবং তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ ও মহাসচিব এমএ আউয়ালের লক্ষ্মীপুর-১ আসনসহ ১৫টি করে আসনের দাবি তুলেছে এই দুই দল।
এদিকে, জাসদ ভেঙে গঠিত বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নড়াইল-১, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের পঞ্চগড়-১ এবং কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের চট্টগ্রাম-৮ আসনসহ ২০টি আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তবে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় দলটির কাঙ্ক্ষিত আসন সংখ্যা অনেক কমে আসবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। জোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দল চায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়ার চট্টগ্রাম-১ আসনসহ অন্তত ৬টি আসন। গণতন্ত্রী পার্টি চায় দলের সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলীর সিলেট-১ আসনসহ ১০টির বেশি আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা। কমিউনিস্ট কেন্দ্র চাইছে দলের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায়ের জন্য দুটি আসন। এছাড়া ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদ (রেজাউর)সহ শরিক অন্য দলগুলো মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ আশা করছে আওয়ামী লীগের কাছে।
কয়েকজন নেতা বলেছেন, দল হিসেবে ছোট-বড় হলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট গঠনের শুরুর থেকেই সব আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন তারা। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে শরিক দলগুলোকে তাদের কাঙ্ক্ষিত আসনে ছাড় না দিয়ে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও একই অবস্থা দেখা গেছে। গত নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি ও অভিন্ন জাসদকে ৬টি করে এবং তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) ২টি করে আসন দেওয়া হয়েছিল। পরে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু) ও ন্যাপ একজন করে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য পায়।
জাতীয় নির্বাচনের আসন বণ্টন প্রশ্নে ১৪ দলের শরিকদের ক্ষোভের বিষয়টি বর্তমানে অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। গত মাসে রাজধানীতে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এখনই আসন বণ্টনের বিষয়টি ফয়সালা করে রাখার প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছেন শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা। ওই অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জোটের আসন ভাগাভাগির কাজটি এখনই ঠিক করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, এখন ঠিক না করে শেষ মুহূর্তে ভাগাভাগি করলে এবং যদি বলা হয়, ‘যা দেব তোমরা তা নিয়েই খুশি হও’- এটা এবার হবে না। কারণ সামনে কঠিন পরীক্ষা। ওই অনুষ্ঠানে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়া বলেছেন, ১৪ দলের শরিকদের মর্যাদার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। একই সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীতে দলীয় এক জনসভায় বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ১৫টি আসন দিতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া ১৪ দলের ঐক্য মজবুত হতে পারে না
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম অবশ্য আসন বণ্টন প্রশ্নে জোটে কোনো সংকটের বিষয় অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আসন বণ্টনের বিষয়টি সময়মতো শরিকদের সঙ্গে বসেই ফয়সালা করা হবে। আর ১৪ দলের ঐক্য অটুট ছিল, আছে এবং থাকবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, তারা নিজেদের মতো করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জয়লাভের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে দলের অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীই গণসংযোগ করছেন। তবে আগামী নির্বাচন কোন অবস্থায় হয় তার ওপরই আসলে নির্ভর করবে তারা কতগুলো আসনে প্রার্থী দেবেন বা ১৪ দলের কাছে চাইবেন। তবে জোটগত নির্বাচনে অবশ্যই যথাযথ মূল্যায়ন আশা করেন তারা।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, অনেক আসনে তাদের দলের যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, যারা জোটের মনোনয়ন পেলে জিতে আসতে পারবেন। আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সেভাবেই মূল্যায়ন চান তারা।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ১৪ দল একসঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। এই ক্ষমতায় আসার পেছনে শরিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। তাই আসন বণ্টনসহ সব ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়নই আশা করেন তারা।
গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুর রহমান সেলিম বলেন, তারা নিজেদের মতো করে তালিকা তৈরি করছেন। নির্বাচনের আসন বণ্টন প্রশ্নে আলোচনা শুরু হলে সেটি তোলা হবে। এক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন বলেই প্রত্যাশা তাদেরও রয়েছে। একই মত দিয়ে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায় বলেন, ১৪ দল ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির আদর্শিক একটি জোট। তারপরও শরিক দলগুলো নির্বাচনে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা চায়।