সবার চোখ আদালতের দিকে,খালেদার সাজা না খালাস
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ ১০ বছরের আইনি প্রক্রিয়া শেষে টানটান উত্তেজনার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এতিমদের জন্য পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার। আর এই রায়ের প্রতি দেশবাসীর চোখ। সর্বত্রই আলোচনা, রায়ে কি হবে কি হবে না তা নিয়ে!
পুরান ঢাকার বকশিবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের এই রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। রায়ে বেগম খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন এবং সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই নগরীর রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় প্রদানকে কেন্দ্র করে গত বেশ কিছুদিন ধরে আদালতসহ সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশি চলেছে সারাদেশে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা থেকে এই গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমনটাই বলছে পুলিশ।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অরফানেজ মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি মামলা দায়ের করে দুদক। এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করা হয়। একই দিনে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ট্রাস্ট সংক্রান্ত এই দুইটি মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায়। দণ্ডবিধির ৪০৯/ ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠনের পরই শুরু হয় দুইটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদ আসামি হিসাবে রয়েছেন। এর মধ্যে তারেক রহমান, কামাল সিদ্দিকি ও মমিনুর রহমান পলাতক। খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন। আর সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন কারাগারে আছেন।
অভিযোগ গঠন থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে খালেদা জিয়া এই আদালতের কয়েকজন বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান। ফলে পাঁচবার বিচারক পরিবর্তন করা হয়েছে। বিচার চলাকালে আদালতে হাজির না হওয়ায় দুইবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অবশ্য আদালতের ওই পরোয়ানা তামিল হয়নি একবারও। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা মঞ্জুর করেন বিচারক।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিশেষ জজ আদালত-৫ গত ২৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি (আজ) দিন ধার্য করে। সেই মোতাবেক আজ বৃহস্পতিবার সকালে রায় ঘোষণার উদ্দেশ্যে বিচারকের এজলাসে বসার কথা। তবে আজই রায় ঘোষণা করবেন কিনা সেটা বিচারকের নিজস্ব এখতিয়ার। ইতোপূর্বে অনেক মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেও নির্ধারিত তারিখে তা ঘোষণা না করে ভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করার নজির রয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি যেসব আসামি কারাগারে রয়েছেন তাদেরকেও হাজির করা হবে আদালতে। দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য তাদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।’ অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, জাল নথি সৃজন করে খালেদা জিয়াকে ‘চোর’ অপবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়রানির উদ্দেশ্যে করা এ মামলায় ন্যায় বিচার হলে খালেদা জিয়া অবশ্যই খালাস পাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।