১৪ আগস্ট এলেই ক্রিকেট ইতিহাসের একটি পাতা ফিরে আসে বর্তমানে। ১৯৪৮ সালের এই দিনেই তো ওভালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান নেমেছিলেন শেষবারের মতো ব্যাটিং করতে। উসাইন বোল্টের মতো ক্রিকেটের এই মহানায়কের বিদায়টাও হয়েছিল বিয়োগান্ত!
৫২ টেস্টেও ৮০ ইনিংসে যাঁর ২৯টি সেঞ্চুরি। আর মাত্র ৪ রান করলেই গড়টা হতো ঠিক ১০০—সেটিই করতে পারেননি স্যার ডন। সেটি হতে দেননি ইংলিশ লেগ স্পিনার এরিক হলিস। তবুও যে গড়টা (৯৯.৯৪) রেখে গেছেন ব্রাডম্যান, সেটিও প্রায় ‘অবিনশ্বরে’ রূপ পেয়েছে। তাঁর অবসরের ৬৯ বছরে বহু প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান এসেছেন এই মর্ত্যে, রেকর্ডের অনেক পাতা উল্টে-পাল্টে ফেলেছেন। তবুও টেস্ট গড়ের হিসাবে সব সময়ই ব্র্যাডম্যানের পরেই থাকতে হয়েছে তাঁদের। ব্র্যাডম্যানের কাছাকাছি যাওয়া দূরে থাক, ব্র্যাডম্যানের অনেক পেছনেই থাকে এ যুগের সেরা ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং-গড়।
ব্যাটিং গড়ে ঠিক ব্রাডম্যানের পরে—এই গৌরবময় কথাটা বলার সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানেরও—মুমিনুল হক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে ‘প্রথম আলো’র সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘ব্র্যাডম্যানের পরই মুমিনুল!’। টেস্টে কমপক্ষে ৭০০ রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্যার ডনের পরই ব্যাটিং গড় ছিল তাঁর (৭ টেস্টে ৭৫.৫০)।
গড়ের এই ঊর্ধ্বমুখী যাত্রাটা পরে আর ধরে রাখতে পারেননি মুমিনুল। সামনে যত এগিয়েছেন, ততই বুঝেছেন, টেস্ট আঙিনার পিচ্ছিল পথে দুর্দান্ত গতিতে এগোনো কতটা কঠিন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাঁর গড় ছিল ৭০-এর ওপরে, সেটিই এখন নেমে এসেছে ৪৬.৮৮-এ। যদিও এখনো টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ।
ঠিক ব্র্যাডম্যানের শেষ টেস্টের স্মৃতিচারণা করতে নয়, পাকেচক্রে আজ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এলেন মুমিনুলই। এ কথা-ও কথা ঘুরে চলে এল ব্যাটিং গড় নিয়ে। একটা সময় ছিলেন ব্রাডম্যানের পর, গড়ের লেখচিত্রটা সেখান থেকে ক্রম নিম্নমুখী—এ নিয়ে কতটা চিন্তিত তিনি?
মুমিনুল অবশ্য প্রায়ই বলেন, পরিসংখ্যান-রেকর্ড নিয়ে তিনি ভাবেন না। বরং গ্রাফের ওঠা-নামাটা তিনি স্বাভাবিকভাবেই দেখেন, ‘যখন খেলবেন, একটা গ্রাফ ধরে রাখা কঠিন। বিশ্বের সব ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে এমনটা হয়, সে যত বড় ব্যাটসম্যান হোক। একটা সময় গ্রাফটা একটু নিচে নামে। এটা আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। আমি মনে করি, কাটিয়ে উঠতে পারব। সেটা নিয়ে কাজও করছি। টিম ম্যানেজমেন্ট, পরিবার, কাছের মানুষ—সবাই অনুপ্রাণিত করছে।’
মুমিনুলের বড় অনুপ্রেরণা তো হতে পারেন তিনি নিজেই। চূড়ার দিকে কীভাবে এগোতে হয়, সেটি তো চূড়াচ্যুত মানুষেরই ভালো জানার কথা!