নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, ও হারুন অর রশিদ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত এসপি মনিরুল ইসলাম এর। এ অভিজ্ঞতা তাকে চলার পথে সহায়তা করছে। সেই সাথে সহযোদ্ধাদের সহযোগীতায় ৮ নভেম্বরের পর থেকে বেশ ভালোভাবেই ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন এ চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সময়ে জেলায় পুলিশী তৎপরতা ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, নারায়গঞ্জের আলোচিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বদলি হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আনন্দ চলে আসে। যারা বিভিন্ন এলাকাতে গা ঢাকা দিয়ে ছিল তাদের প্রকাশ্যে দেখা মিলে। জানা গেছে, ১৭ নভেম্বর বিকেলে হত্যা ও সন্ত্রাসী মামলার আসামি মীর হোসেন মীরুর বাহিনীর কুতুবপুরের ব্যবসায়ী মুরাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। এ ঘটনায় মুরাদের ভাই চাঁদ শিকদার সেলিম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। শুক্রবার রাতে সেলিমকে থানায় ডাকা হলে সেখানে উপস্থিত মীর সোহেল আলী ও শাহীন ব্যবসায়ী সেলিমকে মারধর করেন। পরে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসানুজ্জামানের কক্ষে নিয়েও হুমকি-ধমকি দেয়। এ ঘটনায় থানায় পৃথক আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী সেলিম। অভিযোগ দায়েরের একদিন পরই ফতুল্লা থানা থেকে পরিদর্শক হাসানুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়। একই দিন অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয় আর মামলায় আসামী করা হয় মীর সোহেল আলীকে। এই মামলার হওয়ার পর থেকে আলোচনায় আসে ভারপ্রাপ্ত এসপি মনিরুল ইসলাম। প্রভাবশালীরা বুঝতে পারে, অন্যায় করলে তার আমলেও ছাড় দেয়া হবে না।
সূত্রমতে, গতকাল শনিবার পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের নির্দেশে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম গাঁজা, ১৩ গ্রাম হেরোইন, ১৪০ পিছ ইয়াবা এবং ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী সহ ২২জনকে আটক করেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। সূত্রে জানা গেছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- যাত্রাবাড়ি রেল লাইন বস্তি এলাকার আনসার মন্ডলের ছেলে রায়হান (১৯) এবং মো. আ. আলীমের ছেলে আকাশ (২০)। এছাড়া ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে জাহিদ (২৫)। এছাড়া ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকায় আরেক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং সন্দেহে ৫ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হল, জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (১৮), আবুল কালামের ছেলে হৃদয় (১৮), ওমর আলীর ছেলে সায়ন (১৯), আবু সামার ছেলে মোস্তাকিন (১৮) এবং তোতা প্যাদার ছেলে হাসান (৩০)। অন্যদিকে পিলকুনি এলাকা থেকে মাদক সন্দেহে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হল, প্রেম চাঁনের ছেলে কমল চন্দ্র (৩০), মৃত আবুল কাশেমের ছেলে সবুজ (৩০), রফিকের ছেলে আলমগীর হোসেন (২৮), ফরিদ মিয়ার ছেলে শরিফ মিয়া (২২), মজিবরের ছেলে আওলাদ হোসেন (২৫), হাসান আলীর ছেলে মো. সানী (২৫)।
এর আগে ফতুল্লায় ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার কয়েল কারখানার নারী শ্রমিক ধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগের পর পরই এসপি (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলামের নির্দেশে দ্রুত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামের চেষ্টায় জিনের বাদশা চক্রের তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা পেশাদার প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা একাধিক রেজিস্ট্রেশনবিহীন ভুয়া মুঠোফোনের সিম কার্ড ব্যবহার করে ‘জিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে নানা কথাবার্তা বলে। একপর্যায়ে ভক্ত বানিয়ে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। এ বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া উচিত। কেউ যেন লোভের বশবর্তী তাদের ফাঁদে পা না দেয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত এসপি মনিরুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেক অংশে কমে এসেছে। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার হয়েছে আগের তুলনায় বেশি। সূত্রমতে অক্টোবর মাসে ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, ৫৩টি নারী নির্যাতনর ঘটনা ঘটেছে, ২টি অপহরণ সংঘটিত হয়। সেখানে নভেম্বর মাসে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটে। ৩৪টি নারী নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও অপহরণের কোন ঘটনা নেই। এছাড়া নভেম্বর মাসে ৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।