আজ বুধবার, ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সড়কে পার্কিং, শহরে যানজট

  • রাজউক এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি- নগর পরিকল্পনাবিদ
  • সমাজের মানুষগুলোর চরিত্র বদলাতে হবে- এএসপি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
দেশের শীর্ষ ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জের অন্যতম সমস্যা যানজট। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি, জনবল সংকট, চালকদের খামখেয়ালীপনা ও মার্কেটগুলোতে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা না রাখাসহ নানা কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় পুরো শহর জুড়ে। তবে সাধারণ মানুষের দাবি, নগরীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ অবৈধ গাড়ি পার্কিং। চাষাড়া থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু রোড হয়ে ২নং রেল গেট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের বেশিরভাগ মার্কেটগুলোতে কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই যত্রতত্র যেখানে সেখানে গাড়িগুলো পার্কিং করে চালকরা।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রত্যেকদিন আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। অবৈধ পার্কিং করা হচ্ছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি না হয় জরিমানা করছি। এরপরও সড়কে অবৈধ গাড়ি পার্কিং বন্ধ হচ্ছে না। তাদের মতে, সকলেই তো শহর কেন্দ্রীক। তারা গাড়ি নিয়ে শহরে এলে কোথাও না কোথাও পার্কিংতো করতে হবে।

সরেজমিনে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়ক ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে গাড়ী নিয়ে এসে রাস্তার মধ্যে পার্কিং করে রেখেছে চালকরা। চাষাঢ়া খাজা সুপার মার্কেটের দুই পাশেই একাধিক গাড়ি রাখা হয়েছে। উত্তর পাশে শাপলা ব্যাটারী হাউজের পাশে মেরমাতের জন্য প্রতিদিন একাধিক গাড়ি সড়ক দখল করে পার্কিং করে রাখে। একই অবস্থা সমবায় মার্কেট, সায়াম প্লাজা, জাকির সুপার মার্কেটসহ সব বিপনী বিতানের সামনেই এ অবস্থা। সড়কের ওপারে হক প্লাজা, মার্ক টাওয়ারের সামনেও সড়ক দখল করে গাড়ি। শহীদ মিনারের সামনে অবৈধ স্ট্যান্ডে অনেক গাড়ি থাকে। শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশে একটি গ্যারেজের সামনে দিন রাত গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়া শহরের উকিল পাড়া, ক্লাব মার্কেট, পুরান কোর্ট এলাকা, ২ নং রেলগেট, ডিআইটি এলাকায়ও সড়ক দখল করে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয় গাড়িগুলো। অধিকাংশ মার্কেট গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আবার কোন কোন মার্কেট গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখলেও তা ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।

এ সমস্যা সমাধানের বিষয়ে দৈনিক সংবাদচর্চা থেকে ফোন করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মইনুল ইসলামকে। তিনি বলেন, রাজউকের সাথে আমাদের তিন মাস পরপর মিটিং হয়। গত মিটিংয়ে আমরা অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম। তবে রাজউক এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী মিটিংয়ে আমরা আবারও এ বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো। আশা করি সড়কে চলমান এ সমস্যার সমাধান খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত এসকল বিষয়গুলো অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) দেখেন। বেশ কিছু বিল্ডিংয়ের অনুমতি রাজউকের দেয়া আছে। রাজউক, প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

রাস্তা দখল করে পার্কিং করে রাখা একাধিক প্রাইভেটকার চালক জানান, প্রয়োজনেই রাস্তাতে গাড়ি বের করা হয়, প্রয়োজনেই মার্কেটে আসা হয়। সেক্ষেত্রে মার্কেটের মালিকদের উচিৎ গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখা। তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী নিচ তলাতেও দোকান করেছে। তারা যদি নিচ তলায় গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করতো তাহলে তো আমরা রাস্তায় গাড়ি রাখতাম না।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেকদিন দু’বেলা অভিযান করা হয়। আমাদের যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আছেন তিনি এ বিষয়গুলো দেখেন। সড়কে যানজট নিরসনে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। আমরা অবৈধ পার্কিং নিয়ে প্রতিনিয়তই কাজ করাছি। আমি নিজে কালকে ২শ’র বেশি ব্যাটারি চালিত রিক্সার টায়ার কেটে দিয়েছি। মার্কেটগুলোর সামনে যাতে গাড়ি পার্কিং করা না হয় সে বিষয়ে তদারকি করছি। তারপরেও অবৈধ গাড়ি পার্কিং বন্ধ হচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে সমাজের মানুষগুলোর প্রথমে চরিত্র বদলাতে হবে। তাহলেই যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে আমার মনে হয়।