আজ মঙ্গলবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা

সোনারগাঁয়ে হাইকোর্টের

সোনারগাঁয়ে হাইকোর্টের

মাজহারুল ইসলাম : হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও সোনারগাঁয়ে বন্ধ হয়নি কৃষিজমি থেকে মাটি লুটের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে কৃষিজমির মাটি ভেকু যন্ত্র দিয়ে কেটে ইটভাটায় বিক্রি বন্ধ চেয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত খলিলুর রহমান ভুঁইয়া।

পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি রীটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের দ্বৈত বেঞ্চ এক মাসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য ডেপুটি কমিশনার ও সুপারেন্টন্ড অব পুলিশ নারায়ণগঞ্জকে নির্দেশ দেন। তবে এ নির্দেশনার পরও বন্ধ হয়নি মাটি লুটের ঘটনা।

জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বস্তল, তিলাব, কাজীপাড়া, ব্রাহ্মণগাঁও ও কলতাপাড়া মৌজার ১০ গ্রামের কৃষকদের পক্ষে মাটি লুটের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ১১৪ জন ব্যক্তির স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বরাবর একটি আবেদন দেয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি থেকে একটি ভূমি দস্যু চক্র ২০-২৫টি খননযন্ত্র (ভেকু) ব্যবহার করে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। ফলে ফসলি জমিতে তৈরি হচ্ছে গভীর গর্ত। আর এতে আশ-পাশের ফসলি জমি কয়েকদিন না যেতেই ধসে পড়ছে। কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন অভিযোগ পেয়ে গত ১০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে ইউএনও ওই দিনই চিঠিটি সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) এর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। এরপর কয়েক দফা লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। পরে নিরূপায় হয়ে হাইকোর্টে রীট করেন ভুক্তভোগীরা। রীটের আর্জিতে তারা অভিযুক্ত বেশ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেন।

ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক জানান, জামপুর ইউনিয়নের কিছু কৃষককে নামমাত্র মূল্য দিয়ে কিছু কৃষিজমির মাটি কিনে নিয়েছে একটি চক্র। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি সাধারণ নিরীহ কৃষকদের অনেককে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া শুরু করে। এসব মাটি তারা বিক্রি করে স্থানীয় কিছু ইটভাটায়। প্রশাসনের চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তারপরও মিলছে না কোনো প্রতিকার।

জানায়, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিম শিকদার শিপলুর পরোক্ষ নেতৃত্বে বস্তল গ্রামের জয়নালের ছেলে গোলজার, মদনপুরের হাবু গ্রুপের হাবিব, হাতুড়িপাড়া গ্রামের ওলিউল্লাহ’র ছেলে গোলজার, বস্তল গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ডিস আল-আমিন, আব্দুল মজিদের ছেলে সুমন, নুর মোহাম্মদের ছেলে আলমগীর, করম আলীর ছেলে আলী আকবর, আহাদ আলীর ছেলে মফিজুল, আকতুর ছেলে বাতেন, মফিজুলের ছেলে সোহাগ, কলতাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন, ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে লোকমান, জামপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রুস্তম আলীর ছেলে যুবলীগ নামধারী সোহরাব হোসেন ও জামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নামধারী আব্দুন নুরসহ ২০/২৫ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বস্তল, কাজীপাড়া,তিলাবো ও ব্রাক্ষ্মণবাঘা মৌজায় প্রায় ৭শত বিঘা তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে ইটভাটায় চড়া দামে বিক্রি করছে। স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ, মাটি খেকোরা কৃষি জমির মাটি এতটাই গভীর করে কেটে নিয়ে যায় যে যে কেউ দেখলে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া জমিটিকে কোন ভাবেই পুকুর না বলে উপায় থাকবেনা। তাদের মতে, প্রতিটি জমি ভেকু দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে কেটে নিচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা। ফলে পাশের জমির মাটি স্বভাবতই ওই গর্তে পড়ে যায় এবং তা বিনা টাকায় ও বিনা অনুমতিতে নিয়ে যায় তারা। ফলে অনেক জমির মালিক বাঁধ্য হয়েই মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতি মধ্যে একাধিক বার মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কয়েক জনকে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। হাইকোর্টের রিটের আদেশ এখনোও আমাদের হাতে পৌছায়নি। কপি হাতে পেলেই আদেশ অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ