মাজহারুল ইসলামঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উ্পজেলায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে কৃষিজমি ও পাশ্ববর্তী মারিখালী নদী ও সরকারী দুটি হালট দখল করে জোরপূর্বক বালু ভরাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের বৈদ্যোরবাজার ঘাট এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে এ বালু ভরাটের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও আদালতে কৃষি জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছিল। মামলা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফ তার প্রভাব খাটিয়ে লোকজন দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করে এ বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংঙ্খা করছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে স্থানীয় ভোক্তভূগী হাজী আজিজুল্লাহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের বৈদ্যেরবাজার ঘাট এলাকায় হাজী আজিজুল্লাহ ৭টি দাগে প্রায় ১ একর ১০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের স্ত্রী সুরাইয়া করিম মুন্নীর সঙ্গে আদালতে একটি মামলা চলছিল। মামলা বিচারাধীন থাকাবন্থায় হাজী আজিজুল্লাহকে না জানিয়ে সুরাইয়া করিম মুন্নী বিরোধকৃত জমি হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফা কামাল ওরফে আল মোস্তফার নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে মো. মোস্তফা কামাল বিরোধকৃত সম্পত্তিতে বালু ভরাটের জন্য স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডা. আব্দুর রউফ তার দলীয় বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোতালেব হোসেন ওরফে হোসেন মেম্বার,মঞ্জুর মল্লিক হিরো, অহিদুল্লাহ মেম্বার, জাহাঙ্গীর হোসেন, হামিদুলসহ ৩০-৩৫জনের একটি সিন্ডিকেট ওই জমির পাশ্ববর্তী দোকানপাট উচ্ছেদের জন্য ১৫দিনের মৌখিক নোটিশ দেয়। দোকানপাট উচ্ছেদ না করলে ওই সিন্ডিকেট দোকানপাট ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও দোকানপাট রেখেই গত এক সপ্তাহ ধরে কয়েকটি শক্তিশালি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু আজিজুল্লাহর বিরোধকৃত সম্পতিই নয় এলাকার নিরীহ প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেন, মজিবুর রহমান, শাহজালালসহ প্রায় ১০-১২জনের জমি ক্রয় না করেই কৃষি জমি ও পাশ্ববর্তী মারিখালী নদী দখল করে এ বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় ভোক্তভোগী আজিজুল্লাহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর, সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। খবরে পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সোনারগাঁও ভূমি অফিসের কর্মকর্তরা এসে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দেয়। কিন্তু সীমানা অতিক্রম করে বালু ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। ফলে মারিখালি নদীটি ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ভোক্তভোগী আজিজুল্লাহ বলেন, আমার বিরোধকৃত সম্পত্তি নিয়ে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। এ বিরোধকৃত সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফ একটি সিন্ডিকেট করে কোম্পনির পক্ষ নিয়ে সম্পত্তি দখল করে জোরপূর্বক বালু ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও অজ্ঞাত কারনে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ভোক্তভোগী মুজিবুর রহমানের অভিযোগ, আমরা সোনারগাঁও থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করার জন্য অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলাম। তাদের কথাবার্তা রহস্যজনক মনে হয়েছে।
ভোক্তভোগী প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেনের বড় ভাই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রিকালীন সময়ে আমার ভাইয়ের অংশ তার অনিচ্ছায় প্রায় ১ বিঘা সম্পত্তি অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে যায়। এ অংশসহ ওই কোম্পানির লোকজন বালু ভরাট করে দখলে নিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে। আদালতের আদেশ ওই কোম্পানি কর্ণপাত না করে বালু ভরাট করে যাচ্ছে।
সাহাপুর এলাকার ব্যবসায়ী তারেক হাসান বলেন, মারিখালী নদী বালু ভরাটের ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের নদী পথে মেঘনা নদীতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। অনতিবিলম্বে এ নদী দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারী দুটি হালটও দখল করে নিয়েছে ওই কোম্পানি।
বৈদ্যোর বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপÍরের ভারপ্রাপ্ত অফিস প্রধান মো. নয়ন মিয়া বলেন, নদী দখলে অভিযোগ পাওয়া গেলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি রয়েছে। নদী রক্ষা কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনূর ইসলাম বলেন, বালু দিয়ে কোন ভাবেই নদী দখল করা যাবে না। এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশানার ভূমিকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।