আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইসির বর্তমান সীমানা নির্ধারণের বিপক্ষে বেড়া-সাথিয়াবাসি,১ আসনে ৩৯টি আপত্তি

সীমানা নির্ধারণের বিপক্ষে বেড়া-সাথিয়াবাসি

সীমানা নির্ধারণের বিপক্ষে বেড়া-সাথিয়াবাসি

নবকুমার:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের খসড়া পুনর্বিন্যাসের পর ব্যাপক আপত্তির মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক যোগাযোগ ও জনসংখ্যার ভারসাম্যের নীতি অনুসরণ করার কথা বললেও ইসি নিজেই তা মানেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে এসব আপত্তিতে।

এবারের ইসির খসড়ায় সবচেয়ে বেশি আপত্তি তুলেছে পাবনা ১ আসনে (বেড়া-সাথিয়া) এখানে অধিকাংশ জনগণ ইসির আগের সিন্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে রয়েছে।

পাবনা-২ আসন ইসির পরিবর্তনের বিপক্ষে ৩৯টি আবেদন জমা পড়েছে। যার বেশি ভাগ আবেদনে আয়তন ও জনসংখ্যার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। পাবনা ১ আসনকে একক ভাবে সাথিয়া উপজেলাকে নিয়ে করা হলে ,পাবনা ২ আসনের আয়তন এবং জনখ্যার পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা করে বেড়া সাথিয়া উপজেলার সাধারণ মানুষ ২০০৮ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে।

পাবনা ১ আসনে  ইসির সিন্ধান্তের পক্ষেও প্রায় ১৬ টি আবেদন পড়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল দাবি-আপত্তির শেষ সময় হলেও গতকাল ৪ এপ্রিল পর্যন্ত তারা এ সংক্রান্ত শত শত আবেদন সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী আপত্তিকারীদের সবাইকে শুনানির সময় দিতে হবে। যেসব আসনে ইসি

পরিবর্তন করেনি, অথচ দাবি-আপত্তি এসেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই খণ্ডিত উপজেলা। এসব আবেদনে বলা হয়েছে, ৩৮টি আসনে খণ্ডিত উপজেলা একত্রিত করা হলেও বাকিগুলো কেন করা হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, সব উপজেলা অখণ্ড করতে গেলে জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না। অথচ ইসির প্রকাশিত খসড়া তালিকা যাচাইয়ে দেখা গেছে, জনসংখ্যার চেয়ে প্রশাসনিক অখন্ডতা রক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে সংসদীয় আসনগুলোতে জনসংখ্যার ব্যবধান বাড়ছে। ২০০৮ সালে ৩৬টি আসনে এই ভারসাম্যহীনতা থাকলেও ২০১৩ সালের বিন্যাস ও এবারের খসড়া বিন্যাসে এই সংখ্যা ৬২টিতে গিয়ে পৌঁছেছে।

কবে নাগাদ এসব দাবি-আপত্তির শুনানি শুরু হবে, জানতে চাইলে ইসির সীমানা পুনর্বিন্যাস কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম  বলেন, খসড়া প্রকাশের পর বিষয়টি ইসি সচিবালয় তদারক করছে। যেসব দাবি-আপত্তি এসেছে সেগুলো সমন্বয় করে তারা সময় নির্ধারণ করবেন। কমিশন সভার সম্মতি নিয়ে পর্যায়ক্রমে সবার বক্তব্য শোনা হবে।

আইনে ভৌগোলিক যোগাযোগ বা আঞ্চলিক অখণ্ডতার কথা থাকলেও ইসির খসড়ায় এর ব্যত্যয় ঘটেছে। শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনে নতুন সীমানায় ভোটার সংখ্যার ব্যবধান বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নদী দিয়ে বিভাজিত একটি এলাকাকে অন্য একটি আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

 

ইসির পরিবর্তন প্রস্তাবে আপত্তি এসেছে রংপুর-১ ও ৩, নীলফামারী-৩, কুড়িগ্রাম-৪, পাবনা-২, মাগুরা-১ ও ২, খুলনা-৪, সাতক্ষীরা-৪, জামালপুর-৪, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১৪ ও ১৯, নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫, শরীয়তপুর ২ ও ৩, মৌলভীবাজার-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, কুমিল্লা- ১, ৬ ও ১০, নোয়াখালী ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭ আসনে।

ইসির পরিবর্তনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে প্রস্তাব এসেছে পাবনা-১, কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪, সাতক্ষীরা-৪, জামালপুর-৪ ও ৫, ঢাকা-৩ ও ১৯, শরীয়তপুর-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ও ৬ এবং কুমিল্লা-১, ২ ও ১০ আসনে।

ইসি পরিবর্তন না করলেও পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, যশোর-৪, নড়াইল-১ ও ২, সাতক্ষীরা-২, বরগুনা-১, পিরোজপুর-১, ২ ও ৩, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১, গাজীপুর ২ ও ৩, নারায়ণগঞ্জ-২, ফরিদপুর ২, ৩ ও ৪, সিলেট ২ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, নোয়াখালী-১, লক্ষ্মীপুর-২ এবং চট্টগ্রাম-১৪ নম্বর আসনে।

৩৮টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে গত ১৪ মার্চ ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছিল ইসি। তখন মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষ থেকে ইসির এ সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। প্রকাশিত খসড়ার ওপর আপত্তি, সুপারিশ দেওয়ার জন্য ১ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসি।

ইসির সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ে সাত শতাধিক আবেদন এসেছে। ইসি যে ৩৮টি আসনের সীমানায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে তার ৩৪টির বিষয়ে আপত্তি এসেছে। আর ইসি এবার পরিবর্তন করেনি এমন ২২টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে।