আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিএনজি সংগঠনে অনৈক্যের সুর!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
ঢাকা মহনগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ নামক নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ নিয়ে সিএনজি সংগঠনগুলোতে অনৈক্যের সুর দেখা দিয়েছে। এ সংগঠন ও তাদের ৯ দফা কর্মসূচী নিয়েও বেশ কিছু মালিক-শ্রমিক সংগঠন অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, বিতর্কিত লোকদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন প্রকার ঘোষনা ও নির্বাচন ছাড়াই হঠাৎ করে প্রকাশ করে এ সংগঠন। আর কমিটি গঠন করতে না করতেই তারা ৩ দিন লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

একাধিক পুরনো সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, নব্য এই মালিক-শ্রমিক সংগঠনটি বিভিন্ন দাবির কথা উপস্থাপন করে একটি অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। নতুন এই কমিটি একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই কমিটিতে অনেক শ্রমিক নেতা সহ মালিক-শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সূত্র জানায়, বেশীরভাগ শ্রমিক ও মালিক সংগঠন অনিবন্ধিত এবং তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। তাছাড়া একই সংগঠনে একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবি করা এমনও অনেক লোক দেখা গেছে।

এই বিষয়ে ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক ড্রাইবার ইউনিয়ন (৪৫৮৬) সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক জানায়, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ভুলু ও সদস্য সচিব দুলাল উভয়ই মালিক পক্ষের লোক। তাদের নামে একাধিক সিএনজি ও মিশুক রয়েছে। তাহলে তারা কিভাবে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ করে। তাছাড়া আমাদের সংগঠন সহ বেশ কিছু সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক সংগঠন এই ঐক্য পরিষদের সাথে নেই।

তবে নবগঠিত সিএনজি মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বরকতউল্লাহ ভুলু দাবি করেন , আমাদের সাথে সকল মালিক শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। দুই একটা সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক না আসলে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা মালিক শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করবো। পুলিশী হয়রানী, মামলা ও বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো। মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা বলার সময়ে তিনি নিজের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরলে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনেই মালিক পক্ষের কি-না সেই প্রশ্ন সহ আরও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কমিটি গঠনের পর ঢাকা মহনগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের ৯ দফা দাবির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন কর্মসূচী তুলে ধরেন। তাদের ঘোষিত কর্মসূচী ও দাবির মধ্যে রয়েছে; ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলার অটোরিক্সা এবং অন্যান্য অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিক্সা বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা না করে নো পার্কিং মামলা ও ডাম্পিং করা এবং এস.এস স্টিলের গ্রিল বাম্পার রং করার নামে মামলা সহ ভিডিও/গায়েবি মামলাসহ অন্যায়ভাবে কোন রকম মামলা ও রেকারিং করা যাবে না। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদনবিহীন সকল মোটর সাইকেল ও প্রাইভেটকার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সকল চালকদের নির্দিষ্ট পোশাক। পেশাদারী লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ ও সিলিং সংখ্যা সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ কত হবে তা নির্ধারণ করতে হবে এবং রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ী চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট রংয়ের ষ্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদন প্রাপ্ত গাড়ীসমূহের তারিকা ট্রাফিক পলিশের ওয়েবসাইটে প্রদান, সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালের পর চা (৪) বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালকের ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় ভাড়ার মিটারেনর প্রথম ২ কি.মি ৮০/- (আশি) টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কি.মি ৩০/- (ত্রিশ) টাকা এবং ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিট ৪/- টাকা এবং মালিকের দৈনিক জমা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি, চালক মিটারের ভাড়া বৃদ্ধি ও মালিকের দৈনিক জমা বৃদ্ধি না করার পর্যন্ত মিটার ও জমা সংক্রান্ত কোন মামলা না করা, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দৈনিক জমা বাস্তবায়ন করা এবং অন্যায়ভাবে চালিত সিপ্টিং প্রথা বাতিল করতে হবে, শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা/রি-টেস্টিং প্রথা বাতিল করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ ও উৎকোচ নেওয়া বন্ধ, গাড়ি চোর, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, চালক হত্যা বন্ধ করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অটোরিক্সাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা, গ্রাহক সেবায় বিআরটিএ কর্তৃক গড়িমসি ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধ সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর ঘোষনা করা কয়েছে।

জানা যায়, সিএনজি অটোরিক্সা, টেম্পু ইত্যাদি নামে ঢাকা মহানগরে নামে বে নামে একাধিক সংগঠন রয়েছে। যাদের অধিকাংশই অনিবন্ধিত। আর যারা নিবন্ধিত রয়েছে তাদের সংগঠনও একাধিক ভাগে বিভক্ত। তাই এমন অবস্থায় তাদের দাবি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়াও সরকার ৫০০০ হাজার নতুন গাড়ি দেওয়ারও কথা রয়েছে বলে জানান একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে সড়কের নৈরাজ্য পুলিশী হয়রানী একাধিক মামলা, ড্যাম্পিং সহ নানা অসুবিধায় রয়েছে সিএনজি চালক ও মালিকেরা।

অনৈক্যের বিষয় জানতে জাতীয় শ্রমিকলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ জানান, ঐক্য ছাড়া কোন প্রকার দাবি আদায় সম্ভব না কারণ মালিক শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে যদি গ্রুপিং বা দ্বন্দ্ব থাকে সেক্ষেত্রে সরকার সহ সংশি¬ষ্ট সকলে বিব্রত অবস্থায় পরে। এমনঅবস্থায় সাধারণত দাবি আদায় সম্ভব হয় না।

এদিকে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ১৭অক্টোবর ৩দিন লাগাতার ৭২ ঘন্টা সিএনজি অটোরিক্সা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে নতুন আত্মপ্রকাশ করা সিএনজি অটোরিক্সা মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগ্রাম পরিষদ এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষনা দেয়া হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক বরকতউল¬াহ বুলু জানান, অবৈধ সিএনজি চলাচল ও পুলিশী হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে এই আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানানো হয়, বিভিন্ন জেলার অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিক্সার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের দাবিও জানানো হয়। বক্তারা বলেন, বৈধ সিএনজি সঠিকভাবে চলতে পারলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। অটোরিক্সাকে শিল্প হিসাবে ঘোষনা করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

সর্বশেষ সংবাদ