আজ সোমবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সফল পুলিশ সুপার, প্রশাসনের বিরুদ্ধে শামীম ওসমান!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা তিনবার ঢাকা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন জেলার এসপি হারুন অর রশিদ। মাদক উদ্ধার, মামলার রহস্য উদঘাটন, ওয়ারেন্ট তামিল, শিল্প এলকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূরসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষ জনক হওয়ায় সর্ব সম্মতিক্রমে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বিপিএম, পিপিএম বারকে ঢাকা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসাবে মনোনিত করে পুলিশ সুপারের হাতে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়।

নগরবাসীর মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে সফল পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, এ জেলায় ভয়াবহ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম মাদক, সন্ত্রাস ও যানজট। তবে পুলিশ সুপার এ জেলায় আসার পর সেই সমস্যাগুলো পূর্বের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। তবে মাদক আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের চেয়ে ভয়াবহ সমস্যা ছিলো যানজট। তবে সেই যানজট পূর্বের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। মানুষের চাপ আর মাত্রাতিরিক্ত গাড়ীর কারনেই যানজটের সৃষ্টি হতো এই শহরে।

তবে যানজটের আরও কিছু বড় কারণ রয়েছে, আর তা হলো রাস্তা দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড ও ফুটপাতে হকার সমস্যা। কিন্তু রাস্তা দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড কিংবা ফুটপাত দখল করে হকারদের রাজত্য এখন আর দেখা যায়না শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায়। কারণ ঈদানিং অবৈধ স্ট্যান্ড ও ফুটপাতে হকার না থাকার কারনে অন্যরকম এক নারায়ণগঞ্জের দেখা মিলেছে। এমনটাই মনে করেন নগরবাসী। তাছাড়া অবৈধ স্ট্যান্ড ও ফুটপাতে হকার সমস্যা নিয়ে বর্তমানে পূর্বের চেয়ে আরও বেশী কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। আর প্রশাসনের এই কঠোরতার কারনেই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অনেক নেতাদের ফুটপাত আর অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে চাদাঁ সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঠিক সেই কারনেই প্রশাসনের উপরে চড়াও হয়ে আছেন জেলার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা নেতাকর্মী এবং খোদ প্রভাবশালীরাও।

আগামী ২রা মার্চ জনসভাকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমান বিভিন্ন প্রস্তুতি সভায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য প্রদান করছেন এতে পরিস্কার যে তিনি মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি ঐ জনসভায় প্রশাসনের বিপক্ষে কঠোর কোনো মন্তব্য প্রদান করতে পারেন।

পূর্বের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী সভা-সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিত দেখা গেলেও আগামী ২রা মার্চ শামীম ওসমানের ডাকা জনসভায় বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন কিনা তা নিশ্চিত নয় এবং জনসভা উপলক্ষে নাঃগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিমন্ত্রন পত্র প্রদান করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

সম্প্রতি এক জনসভায় শামীম ওসমান বলেছিলেন, প্রশাসনের কিছু লোক জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও বেশী ক্ষমতাবান মনে করেন। অন্যদিকে পুলিশ সুপারের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার দিনেই আগামী ২রা মার্চ জনসভা সফল করার উদ্দেশ্যে ডাকা একটি প্রস্ততি সভায় শামীম ওসমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বলেন ‘উই ডোন্ট ডিপেন্ড অন দ্যা পুলিশ’ অর্থ্যাৎ আমরা পুলিশের ওপর নির্ভর করবো না। আমরা কারও উপরে নির্ভর করবো না। এটা আমাদের নারায়ণগঞ্জ।

তিনি আরও বলেন, কেউ আইসা এখানে সেভেন মার্ডার কইরা যাইবো তার দায়-দায়িত্ব আমরা নিবো না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উন্নতি চাই কিন্তু তাই বলে ইয়াবা পকেটে ঢুকাইয়া কইবেন তোরে লইয়া যামুগা তা হইতে দেয়া হবে ন। ও হবে না। আমরা সবই বুঝি।

অপরদিকে, গত ১৩ জানুয়ারী বন্দর উপজেলার মদনপুরে পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে এক গার্মেন্টস কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্স এ সংযুক্ত করেন জেলা পুলিশ সুপার।

গত ২৩ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়ার পর এসপি হারুন অর রশিদ এর নির্দেশে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিস লাইন্স এ সংযুক্ত করা হয়।

গত ২৭ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় এক নিরীহ যুবককে আটক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর শুনে মারা গেছে তার মা। ওই যুবকের বিরুদ্ধে কোন মামলার ওয়ারেন্ট বা অভিযোগ ছিল না। পুলিশের এ অনৈতিক কা- প্রমাণ হওয়ায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নির্দেশে জড়িত এসআই সাব্বির ও এএসআই রুহুলকে প্রত্যাহার করা হয়।

এছাড়াও পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে বর্তমানে শহরের কোন সিভিল টিম নেই। অপর দিকে কমেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের দৌরাত্ব।

পূর্বে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন চেক পোষ্টে জনসাধারণদের হয়রানি করার অভিযোগ থাকায় রূপগঞ্জ, ভোলাবো ও কালীগঞ্জের চেক পোষ্ট উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের ড্রপ পরীক্ষা করা হয়। সর্বপরি তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন কোন তদবীর শোনা হবে না।

শামীম ওসমানের দেয়া বক্তব্যের সাথে জেলা প্রশাসনের কোন কর্মকান্ডের মিল না থাকার কারনেই জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। কেন শামীম ওসমান হঠাৎ করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এর আগের যে পুলিশ সুপার ছিলেন অর্থ্যাৎ আনিসুর রহমানের সাথে তাকে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করতে দেখা গেছে। কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেই এসপি তো ফুটপাত কিংবা হকার সমস্যা নিধনে কোন কাজ করেননি। তবে বর্তমান এসপি হকার আর অবৈধ স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন বলেই কি শামীম ওসমানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ। না কি অন্য কোন কারণ? এই প্রশ্নটি আছে জেলার হাজারো মানুষের মনে কিন্তু নেই এর কোন উত্তর!

ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী মির হোসাইন মীরু ও পাগলা বাজার এলাকার টেনু গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আলোচিত সন্ত্রাসী মীর হোসাইন মীরুকে হামলাঁ ও চাদাঁবাজির মামলায় আটক করে পুলিশ। তার কিছু দিন পরেই আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দুই কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না ও কবির হোসেনকে মসজিদের টাকার বিষয়ে ঝামেলা করার জন্য গ্রেফতার করে প্রশাসন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে চাদাবাজী, হামলা ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনার কারনেই প্রশাসন আটক করে।

একদিকে সন্ত্রাস, চাদাঁবাজ, ভূমিদস্যু ও অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখলদারদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ প্রশংসিত। অন্যদিকে এসকল কাজ গুলো করার জন্য প্রশাসনের উপরে চড়াও হয়ে আছেন জেলার প্রভাবশালীরা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, আমার দেখা সবচেয়ে ভালো লাগার উদ্ধামি একজন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সকল কাজকে গুরুত্ব সহকারে দেখেন। জেলাতে আসার পর থেকেই ছোট বড় বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া যে সকল সমস্যাগুলো শহর কেন্দ্রীক রয়েছে সে সকল সমস্যা গুলোকে খুব শীঘ্রই সমাপ্ত করবেন এসপি হারুন অর রশীদ। শক্তি নয় ভালোবাসা দিয়ে নারায়ণণগঞ্জবাসীর মন জয় করবেন তিনি।