আজ মঙ্গলবার, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সন্দেহের তালিকায় কর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার : কোটা ইস্যুর আন্দোলনকে উপজীব্য করে নারায়ণগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে দূর্বৃত্তরা। কয়েক দিন পর্যন্ত এই তাণ্ডব চললেও তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি বহু নেতাকর্মীকে। এমপি শামীম ওসমান রাজপথে নামলেও তার পাশে সেদিন অনেককেই দেখা যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ শামীম ওসমানের সন্দেহের তীর যেন নিজ দলের নেতাকর্মীদের উপর! সম্প্রতি তার বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
গত ৩০ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমপি শামীম ওসমান তার কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জালকুড়ি, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড; এসব এলাকায় কেন আমরা আক্রান্ত হলাম, আমি আপনাদের কাছে (কর্মীদের কাছে) বিশ্লেষণ চাইব। আশা করি এখানে নিরানব্বই শতাংশ ছিলো বাহির থেকে আসা, আর ১০ শতাংশ ছিলো আমাদের এলাকার লোক। যারা আমাদের এলাকায় তাদের আসতে পথ দেখিয়েছে, এরা কারা? আমরা তাদের নাম জানতে চাই। যদি স্ব স্ব এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা আমার কাছে তাদের নাম বলতে না পারেন, তাহলে আমাকে ধরে নিতেই হবে যে, আপনারা তাদের সাথেই ছিলেন এবং তাদের সাথেই এলায়েন্স করেছেন। তাদের সাথে আপনাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। এটা আমাকে ধরে নিতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
তার এমন বক্তব্যের পর সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে না আসা কর্মীদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও একে অন্যের প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়ছেন।
বিশেষ করে, ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে দাবানল। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন ইতিমধ্যেই কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু এবং প্যানেল চেয়ারম্যান মিন্টু ভূইয়াকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘১৯ জুলাই রাতে সেন্টু চেয়ারম্যান, ২নং ওয়ার্ডের মিন্টু মেম্বার, যুবদল নেতা শাকিল ভূঁইগড়ের একটি বাড়িতে বিএনপির ক্যাডারদের নিয়ে মিটিং করে। জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা করতে সেন্টু বিএনপির ক্যাডারদের পাঁচ লাখ টাকা দেন। ইউনিয়ন নির্বাচনের পরেরদিন ফতুল্লা আর কুতুবপুরের বিএনপির সব নেতাকর্মী কক্সবাজার গেছে। সেন্টু গেছে এর পরের দিন, সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং করেছে। এরপরে আমি এমপি সাহেবের বাসায় গেলে এমপি আমাকে সেই মিটিংয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন। আমি বলেছি, মিটিংয়ের ছবিও আছে আমার কাছে। সেই ছবি এমপি সাহেবের কাছেও আছে। এমপি তখন বললেন, সেন্টু একটা মীরজাফর। ও যে এতবড় বেঈমানি করবে আমার সাথে তা আমি কল্পনাও করিনি।’
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘সেন্টুর বাড়ির সামনেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠি হাতে জড়ো হয়ে এতোকিছু করলো। সেন্টু কি তা দেখেন নাই? তিনি চেয়েছিলেন ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করবেন। আমরা এবার কুতুবপুর থেকে সেন্টুকেই উৎখাত করবো।’
যদিও জসিম উদ্দিন ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে মিথ্যাচার করেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু এবং প্যানেল চেয়ারম্যান মিন্টু ভূঁইয়া। মিন্টু ভূইয়ার দাবি, তিনি নিজেই দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
জানা গেছে, এক সময়ে বিএনপির প্রসিদ্ধ নেতা হওয়া সত্বেও চেয়ারম্যানি টিকিয়ে রাখতে এমপির সহযোগিতায় রাতারাতি নৌকা প্রতিক নিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান হন সেন্টু। তবে বিএনপি নেতাদের সাথে তার পরোক্ষ ভাবে সখ্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গেল কয়েক দিনের সহিংসতা প্রতিরোধে সেন্টু চেয়ারম্যানকে রাজপথে নামতে দেখা যায়নি।
এদিকে, মনিরুল আলম সেন্টু ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকেই সেদিন রাজপথে দেখা যায়নি। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে সর্বত্র। তথ্য মতে, জালকুড়ি, ভূঁইঘড় ও সাইনবোর্ড ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সানারপাড়, মৌচাক, মাদানীনগর মাদরাসা, ডাচ বাংলার মোড় এবং চিটাগাং রোড এলাকায় ব্যপক তাণ্ডব চালায় দুস্কৃতিকারীরা। তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এসকল এলাকায় যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, তারা প্রত্যেকেই এমপি শামীম ওসমানের কর্মী।
এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ২নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফি, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহ-জালাল বাদল ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর উদ্দিন মিয়া। এর মধ্যে নূর উদ্দিন এক সময়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও বর্তমানে তিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
তবে, বিএনপি-জামায়াত সহ তাদের সমর্থনে দুস্কৃতিকারীরা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হলেও তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি তাদের। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে নিজ দলের নেতাকর্মীদের দিকেই যেন সন্দেহের তীর ছুড়ছেন শামীম ওসমান। গত ৩০ জুলাই রাইফেল ক্লাবে দেয়া শামীম ওসমানের ওই বক্তব্যের মাঝে নিজ নেতাকর্মীদের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।