নিজস্ব প্রতিবেদক:
সম্প্রতি সরকারী তোলারাম কলেজে সাধারণ ছাত্রদের উপর ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে করে আজ সন্ত্রাস নিমূল ত্বকী মঞ্চ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট যৌথ ভাবে এক বিবৃতি প্রদান করেছে।
বিবৃতিতে সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ভয়ের মধ্যে রেখে নিজেদের অবৈধ অর্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য শহরে টর্চার সেল পরিচালনা করে খুন, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন নির্যাতন করে আসছে তারা এখনো পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে তা অব্যাহত রেখেছে। তারা এ টর্চারসেলের তালিকায় নতুন করে যুক্ত করেছে সরকারি তোলারাম কলেজকে। ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ শহরে দীর্ঘদিন ধরে টর্চারসেল পরিচালনা করে আসছে। তাদের আল্লামা ইকবাল রোডের টর্চার সেলে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তারা তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী-কে হত্যা করে, এরপূর্বে তরুণ ব্যবসায়ী আশিকুল ইসলাম-কে এখানে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে র্যাব এ টর্চার সেলে অভিযান পরিচালনা করে নির্যাতনের বহু আলামত জব্দ করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জামতলা হেনা টাওয়ারে তারা মোঃ আলী রাজু নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে। সরকারি তোলারাম কলেজকেও এখন তারা টর্চারসেলে পরিণত করেছে। গত পরশু সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী সৌরভ হোসাইন-কে কলেজে ডেকে নিয়ে শামীম ওসমানের অনুগত ছাত্রলীগের ক্যাডারবাহিনী নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করে। এর আগে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সুপ্তি ও সাবিত আল হাসানকে এ সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করে। এর আগে আরো বহু ছাত্রদের এমনিভাবে কলেজ সংসদ কক্ষে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতনের পরে ছাত্রদের কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার রাখা হয় যে, এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ করতে পারবে না। করলে কলেজে তাদের শিক্ষা জীবন বিপন্ন করা হবে। কলেজ অধ্যক্ষ স্বয়ং এ অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করেন। ওসমান পরিবারের অনুগত অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব নির্যাতনে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিপক্ষ ছাত্রদের কখনো শিবির কখনো বাম সংগঠনের কর্মী প্রমাণের চেষ্টা করে, কখনোবা পকেটে বা ব্যাগে মাদক রেখে এসব নির্যাতনকে বৈধ করার চেষ্টা করে। এ সন্ত্রাসী বাহিনীই গত বছর নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে হামলা করেছে। সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলা করেছে। কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বিভিন্ন সময়ে এসব সন্ত্রাসী হামলা ও নির্যাতনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়েরের পরেও প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আজকে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
আমরা প্রশাসনকে ছাত্র নামধারী এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শিক্ষক নামধারী কতিপয় সুবিধাভোগীদের দ্রুত অপসারণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। সাথে সাথে আমরা কলেজে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে, মাঠে, সংসদসহ বিভিন্ন কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবী জানাচ্ছি।
দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ তোলারাম কলেজকে আমরা টর্চারসেল হতে দিতে পারি না। ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, তোলারাম কলেজে ছাত্র নামধারী এ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে, উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির দায় প্রশাসনকেই বহন করতে হবে। আমরা নারায়ণগঞ্জের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ও আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত এমনিভাবে ধ্বংস হতে দিতে পারিনা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, সদস্য সচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এড. জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল।