আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগঠন গোছাচ্ছে বিএনপি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর এখন সংগঠন গোছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড।

বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। সে অনুপাতে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নতুন নেতৃত্বের গোছাচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়।

ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মূল দলের পূর্নাঙ্গ কমিটি, যুবদল জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ কমিটি সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে বিএনপিপন্থী সংগঠন ডক্টরস এস্যোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও দুদিন আগে দীর্ঘ দিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎসজীবী দলের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংগঠনেরও নতুন কমিটি করা হবে বলে সূত্রে জানা যায়।

দলের হাই কমান্ড বলছে, আহ্বায়ক কমিটির কাজ হলো দ্রুততম সময়ের ভেতরে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সে লক্ষ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন সংগঠন শক্তিশালী করতে ব্যস্ত বিএনপির হাইকমান্ড।

সংগঠনের নেতারা বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা মোকাবেলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে বাস্তবতার নিরিখেই পথ চলতে চান নীতিনির্ধারকেরা।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর দল গোছানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা নানা কারণেই অসম্পূর্ণ থেকেছে। অর্ধেকেরও বেশি সাংগঠনিক জেলায় কমিটি দেয়া হলেও তা ত্রুটিমুক্ত ছিল না। অঙ্গসংগঠনের অবস্থাও বেহাল। কয়েকটি সংগঠনের আংশিক নতুন কমিটি হয়েছে; কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলেও এসব কমিটির কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এর প্রভাব একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও পড়েছে বলে নেতারা বলেছেন। যদিও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তৃনমূলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে, একচেটিয়া হয়ে লবিং করে নিজেরাই নিজেদের কর্মীদের পদ পদবী দিয়ে রেখেছেন। এতে অনেকেই কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এ বছরের ২৭ মার্চ বুধবার জেলা বিএনপির ২০১ সদস্য পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। পরে তা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে ২৬জনকে নিয়ে আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়। যেখানে কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়।

এ বছরের ২৭ মার্চ বুধবার মহানগর বিএনপির ২০১ সদস্য পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে ২৭জনকে নিয়ে আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়। যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

অন্যদিকে গত বছর ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও মহানগর ছাত্রদলের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব। মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু।

২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ আহবায়ক আনোয়ার সাদাত সায়েমকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুর রহমানকে। এই কমিটিতেও পদ পাওয়া সায়েম ও মাহবুব দুজনই জেলা ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।

একইভাবে গত ৭ জুন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি আবুল কাউসার আশা ও সেক্রেটারি সাখাওয়াত ইসলাম রানা। অন্যদিকে গঠিত হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। এতে সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সেক্রেটারি করা হয় মাহাবুব রহমানকে।

আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় ৫ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যথাক্রমে ২৩ মার্চ জেলা ও ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতাদের হাতে এসে পৌছে পূর্নাঙ্গ কমিটির। এর আগে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর শহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক। মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি, মনতাজ উদ্দিন মন্তুকে সাধারণ আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

সর্বশেষ দেখা যায়, গত ১১মে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম এবং সদস্য সচিব হয়েছেন ডা. শফিউল আলম ফেরদৌস।

এবং গত ১৪ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী দলের ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিটিতে অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানকে আহবায়ক এবং আমিনুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর থানা উপজেলা ভিত্তিক কমিটির গঠন করাই এখন আনোয়ার প্রধানের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।
আর এই বিষয়ে জেলা মৎসজীবী দলের আহবায়ক এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান বলেছেন, আমাকে দল মনোনীত করেছে। আমি সংগঠনকে সংগঠিত করবো।

নারায়ণগঞ্জে একাধিক সিনিয়র নেতাকর্মী বলছে, দল ক্ষমতায় না থাকায় বিভিন্ন হামলা মামলার শিকার হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটির মাধ্যমে পুনারায় ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি । তাই দলের হাই কমান্ড নতুন কমিটি ঘোষনা করছে।