সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলে বিরাজমান হযবরল অবস্থা। এক কমিটির কতজন সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক তা নিয়ে গোলমাল অবস্থায় শ্রমিক দল। জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের সভাপতি পদে ৪ জন ও সেক্রেটারি পদে মোট ৫ জন নেতা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ স্বঘোষিত, আবার কাউকে আদালত সভাপতি বানিয়েছেন! তবে সবাই দাবি করছেন একে অপরের কমিটি বৈধ ও অবৈধ। দলীয় প্রধান জেলে এবং বিভিন্ন কারণে মুল দল বিএনপি কোনঠাসা। যেখানে দলকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্র বারবার রাজপথে নেতাকর্মীদের থাকতে বলছে সেখানে জেলা ওমহানগর শ্রমিক দলকে রাজপথে দেখা না গেলেও নিজেদের পদ পদবি জাহিড় করতে দেখা যাচ্ছে হর-হামেশাই।
অথচ দলীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার দীর্ঘ ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সেই আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবেরা নিজেদের কৌশলে সভাপতি ও সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় বেড়াচ্ছেন।
গত ৮ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদলের কোন ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। ১মে শ্রমিক দিবসে শ্রমিকদলের নেতাদের দেখা গেলেও তারা ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে মে দিবস পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদলের কমিটি ও সম্মেলন নিয়ে মামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে অনেক আগেই। প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন ইউনিটে রয়েছে কমিটি পাল্টা কমিটি। এখন পাল্টার উপর পাল্টা কমিটিও এখানে বিদ্যমান।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের নতুন কমিটি আসার পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন ও সদস্য সচিব মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লাকে করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলাম ও সদস্য সচিব হিসেবে আলী আজগরকে নির্বাচিত করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ শ্রমিকদলের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা। এ আবুল খায়ের খাজাও কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের কমিটি মানেন না বলে দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে দেন। যে কারনে তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন যেখানে ফারুক হোসেনকে সভাপতি ও শাহজাহান মিয়াকে সেক্রেটারি করেছিলেন।
এর আগে ২০১৩ সালের কাচপুরে জেলা শ্রমিকদলের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করে দেন মহানগর শ্রমিকদলের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি গোলাম কাদের। ওই মামলার কারনে সম্মেলন করতে পারেনি শ্রমিকদল। মামলায় কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের তৎকালীন সভাপতি সেক্রেটারি ও জয়েন্ট সেক্রেটারি সহ এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে বিবাদী করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মাসদাইরে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের নেতাদের ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি হন নাসিরউদ্দীন ও সেক্রেটারি হন দেলোয়ার হোসেন কনক। একইভাবে মহানগর শ্রমিকদলের সভাপতি ফারুক হোসেন ও সেক্রেটারি হন আনোয়ার হোসেন আশিক।
এ সম্মেলনের ক’দিন পরেই কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি নারায়ণগঞ্জে জেলা শ্রমিকদলের কমিটি ঘোষণা করেন যেখানে নাসিরউদ্দীন ও মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লাকে রাখা হয়। কিন্তু এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন দেলোয়ার হোসেন কনক। তিনিই জেলা শ্রমিকদলের সেক্রেটারি দাবি করলেও বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক দলের রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন।
মাসদাইরে একইদিন সম্মেলনে মহানগর শ্রমিক দলে ফারুক হোসেন সভাপতি ও আনোয়ার হোসেন আশিককে সেক্রেটারি করা হলেও কেন্দ্রীয় কমিটি এসএম আসলামকে আহ্বায়ক ও আলী আজগরকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ২০১৪ সালে সাত খুনের ঘটনায় আনোয়ার হোসেন আশিককে আসামি করা হয়। কিন্তু ওই সময় কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। সকলের পদ দাবি করলেও তার পদটিও তিনি দাবি করতে পারেন। যদিও সাত খুনের মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।
তবে মহানগর শ্রমিকদলের এসএম আসলাম ও আলী আজগরের কমিটির পাল্টা কমিটি গঠন করেন আবুল খায়ের খাজা। যেখানে ফারুক হোসেন সভাপতি ও শাহজাহান মিয়াকে সেক্রেটারি করা হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম এখন দাবি করেন তিনি সভাপতি। তিনি আদালতে মামলাও করেছিলেন। তার দাবি তিনি আদালতে মামলা করায় জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি হিসেবে পদে বহাল রয়েছেন। তিনি হয়েছিলেন আহ্বায়ক এখন তিনি একধাপ এগিয়ে দাবি করেন জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি! তার সঙ্গে কোন সেক্রেটারি নাই! তিনি মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে শ্রমিকদলের সভাপতি দাবি করে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। নজরুল ইসলাম আদালতের একটি আদেশের কপি সব সময় তার পকেটেই রাখেন। কেউ জানতে চাইলে তিনি আদালতের আদেশ দেখিয়ে বলেন তাকে আদালত সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
এদিকে সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিকদলের কমিটি গঠন করেন এসএম আসলাম। যেখানে সদস্য সচিব আলী আজগরকে রাখা হয়নি। ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন যেখানে ফারুক হোসেনকে মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব আলী আজগর বলেছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি এখন জেলা বিএনপির আওতাধীন। তাই আমি মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব হিসেবে মহানগর বিএনপির মুলধারার সঙ্গেই আছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশ রয়েছে মুলদলের কমিটি যেভাবে হয়েছে অন্যান্য কমিটিগুলোও সেভাবে পরিচালিত হবে। তাই সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই।