সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। সংসদে যিনি বক্তব্য রাখলে বাকি সদস্যরা মুগ্ধ হয়ে তার বক্তব্য শোনেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে তার বাণী অনুযায়ী গত ৫ বছরে তিনি সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন নারায়ণগঞ্জে করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। শামীম ওসমান উন্নয়ন চায় তবে সবটুকুই পায় তার অনুসারীরা। রাস্তা-ঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্রিজ সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডগুলোর টেন্ডার তথা ঠিকাদারি শামীম ওসমানের অনুসারীদের হাতেই যায়। এছাড়াও বিভিন্ন পরিবহন সেক্টর, ভূমি ব্যবসা, এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগ সহ অসংখ্য সেক্টরগুলো ওই অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণেই থাকে।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট জাকিরুল আলম হেলাল যিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ও তার পরিবার ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। রাজনীতি শুরু হয় তোলারাম কলেজ দিয়ে। বর্তমানে চাষাড়ায় শোয়েব মার্কেটে তার অফিস রয়েছে। জানা যায়, এখানে প্রায় প্রতিদিন আসেন তিনি। ভূমি ব্যবসা সহ নানা তদারকি করেন এখানে বসেই। তার ভাই মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তিনি। সূত্র জানায়, দুই সন্তানের জনক হেলাল ইতিমধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন আর ছেলে পড়াশুনা করে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অপরদিকে সাজনুর একমাত্র ছেলে লেখাপড়া করতে জার্মানিতে আছেন। এই দুই ভাই ঢাকার উত্তরায় আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরে। শামীম ওসমানের ডান হাত হিসেবে পরিচিত নিজাম নারায়ণগঞ্জে কোন বাড়িঘর করেননি। আগে থেকেই তিনি ঢাকায় বাস করেন। তবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে তার মালিকানা একটি পার্ক রয়েছে। চাষাড়ার সায়াম প্ল¬াজার তিন তলায় তার বিরাট অফিস রয়েছে। যেখানে দিনভর লোকজন আসা যাওয়া করে। অভিযোগ রয়েছে, এ অফিসে বসে বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তিনি।
মোক্তার হোসেন। এক সময় ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে ভাগ্য অন্বেষনে জাপান যান। মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরী এলাকায় বাড়ি হলেও তার বাবা ছিলেন বিহারী। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হন। এরপর পরিবহন সেক্টরে তার প্রভাব দিন দিন বাড়তে থাকে।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীও একজন অঘোষিত নিয়ন্ত্রক। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে মাঠ পর্যায়ে নিজের অবস্থান তৈরি করে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকারি দলের সাইনবোর্ড ও ক্ষমতার দাপটে মীর সোহেল এখন ফতুল্লার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি প্রভাবশালী একজন নেতা। ফতুল্লা মডেল থানার পাশে একটি অফিস তৈরি করে সেখানে বসেই সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। ৩৫ লক্ষ টাকা মূল্যের বিলাশ বহুল গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করেন তিনি।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম ফাইজুলও কোন অংশে কম যান না। ফতুল্লা হাজীগঞ্জ, কায়েমপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন সেক্টর তার দখলে। তার জীবন যাপনও বিলাশ বহুল। বেশিরভাগ সময় থাকেন রাজধানী ঢাকায়। ঢাকায় বাড়ি করা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জেও রয়েছে তার বিশাল বাড়ি।
জানা যায়, বক্তবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. শওকত আলীর পুরো এলাকার ঠিকাদারি পায় তার মেয়ের জামাই সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি।
সূত্র জানায়, সাংসদ শামীম ওসমান পুত্র অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। ইদানিং তিনিও বিভিন্ন ঠিকাদারি হাতে নিচ্ছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরী, মাসদাইর, টাগাড়পাড়, কুতুবআইলসহ যেসব এলাকায় গার্মেন্টস ঝুট সেক্টর যারা নিয়ন্ত্রণ করেন শামীম ওসমানের অনুগতরাই। এছাড়াও অনেক গার্মেন্টসের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে শহরের কিছু প্রভাবশালী নেতা।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পরিবহন ব্যবসায়ী হলেও তারা পরিচিত সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। এ সুবাদেই নারায়ণগঞ্জে দাবড়ে বেড়ান তারা। কেউ কেউ দিনভর অবস্থান করে বেলা শেষে চলে যান রাজধানী ঢাকায়। এভাবেই দিন শেষ করে যাচ্ছেন শামীম ওসমানের অনুগতরা। শামীম ওসমান উন্নয়ণ চাইলেও সেই উন্নয়ণের বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ অনুগতদের পকেটেই চলে যায়। সূত্র মতে, সাংসদ শামীম ওসমানের ওই অনুগতদের কেউ কেউ এখন শত কোটি টাকার মালিক।

