সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের বর্তমান এমপি শামীম ওসমানের চ্যাঞ্জের জবাব দিয়েছে একই আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন। গিয়াস উদ্দিন শামীম ওসমানকে উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
শামীম ওসমানের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তিনি যা কাজ করেছেন তার ৫ ভাগের ১ ভাগ কাজও যদি সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন করে থাকেন তাহলে তিনি নির্বচন করবেন না। তাই তিনি উন্নয়ণের হিসাব উত্থাপনের জন্য সাবেক এই সাংসদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এক মঞ্চে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি, সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের দল পরিবর্তন নিয়েও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন বলেন, সাহস থাকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন দেখি জনগণ আপনাকে বেছে নেয় না আমাকে নেয়।
গিয়াসউদ্দিন শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কাজের তুলনা করার দরকার নেই। আপনি যেভাবে বলে বেড়াচ্ছেন ৭ হাজার ৪‘শ কোটি টাকার উন্নয়ণ এবার আপনি করেছেন। আমি ধরেই নিলাম আপনি একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, মিথ্যা বলছেন না। কিন্তু তার একটি তালিকা প্রকাশ করেন। কোথায় কোথায় কত টাকা খরচ করলেন সে বিবরণসহ এই তালিকা প্রকাশ করেন। দেশের নাগরিক হিসেবে এটুকু জানার অধিকার আমাদের আছে। আশা করি আপনি একটি তালিকা প্রকাশ করে তা সবার মাঝে বিতরণ করবেন।”
গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আমি এমপি হওয়ার পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে কথা দিয়েছিলাম এই অঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত করবো। আমি সেটি করতে পেরেছি। কারণ, আমি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে এখানে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ভীত ছিলেন এই অঞ্চলের মানুষজন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কথা বলার সাহস পেতো না কেউ। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গোলাগুলির ঘটনা ঘটতো। আমি সেইসব সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছি।”
দল পরিবর্তন করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি তো দল পরিবর্তন করতে চাইনি! দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম আপনাদের কারণে, মানসম্মান রক্ষার্থে আর ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে। শুধু আমি কেন, অনেকেই দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এখনও অনেকে আছেন যারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ, তাদের অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে আছেন। নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন রাজনীতি থেকে। সম্মানের কথা বিবেচনা করে অনেকেই দলত্যাগ করেছিলেন আপনাদের কারণে।”
তিনি বলেন, “আমি কোনো দ্বন্দ্বের কথা বলছি না। আমি কোনো সাংঘর্ষিক কথা বলছি না। আমি বা আমার মতো যারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তাদের সবারই একটা স্বপ্ন ছিলো। আদর্শ ছিলো। একটা সুন্দর সুজলা, সুফলা সোনার বাংলাদেশের। যে দেশের নাগিরক তার স্ব স্ব অবস্থান থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে। কথা বলার অধিকার পাবে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আমি বলবো, এখনও সেই সম্ভবানা মরে যায়নি।”
গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আপনি একদল করতে পারেন আমি আরেক দল করতে পারি। মতের প্রার্থক্য থাকতে পারে। তাই বলে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাত কেন হবে? আমি শামীম ওসমানসহ সবাইকে আহ্বান করবো, আসেন নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ণের স্বার্থে এমন প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে সৃষ্টাচারের রাজনীতিতে অভ্যস্ত হই। যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের দেখে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে অভ্যস্ত না হয়ে সুন্দর, মসৃণ পথে হাঁটতে পারে এবং দেশের যে কোনো স্থানে যাতে বুক উঁচু করে বলতে পারে ‘আমি নারায়ণগঞ্জবাসী।”
সাবেক এই সাংসদ বলেন, “আমাদেরকে এখন আপনাদের মতো গণমাধ্যমের উপরই ভরসা করতে হয়, কথা বলার জন্য। কারণ, তাদের মতো প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করা আমাদের জন্য অলিখিত নিষিদ্ধ। নিজ দেশ, নিজের ভূমিতে থেকেও যেন আমরা পরবাসী জীবন যাপন করছি। যেন আমরা ভিন্ন কোনো দেশের নাগরিক।”
প্রসঙ্গত, সিদ্ধিরগঞ্জে একটি কর্মীসভায় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘গিয়াসউদ্দিন সাহেব তো কোনো কাজই করেন নাই। তিনি খালি খাই, খাই আর খাই করে ৫ বছর কাটিয়েছেন।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন এর জবাবে বলেছিলেন, ‘শামীম ওসমান বিভিন্ন স্থাণে বলে বেড়ান তিনি ৭ হাজার ৪‘শ কোটি টাকার উন্নয়ণ করেছেন। এত টাকার উন্নয়ণ তিনি কোথায় করলেন? আমি বিশ^াস করি তিনি নিজেও এর হিসেব দিতে পারবেন না।’
গিয়াসউদ্দিন বলেন, “তিনি বলেছেন ‘তার (শামীম ওসমান) ৫ ভাগের ১ ভাগ কাজও আমি করিনি’ কিন্তু আমি বলবো, একটি ডুবন্ত জলহস্তির মতো লোকসানের আদমজী ঝুট মিলের পরিবর্তে যেই ইপিজেড করেছি, যেখানে ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। যেখান থেকে এখন হাজার হাজার কোটি টাকা ফরেন কারেন্সি আসছে এর মতো একটা কাজের উদাহরণ আপনি দেখান।”
তিনি বলেন, “লোকসানের মুখে থাকা বন্ধ আদমজি ঝুট মিলটির পরিবর্তে এখানে ইপিজেড করলে মানুষ কতটা উপকৃত হবেন, কতো মানুষের কর্মসংস্থান হবে তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান সাহেবকে নানা ভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম বলেই ইপিজেড নির্মাণ হয়েছে। আর এর ফলে দেশের প্রবৃদ্ধিতে এই ইপিজেড বিশাল একটি ভূমিকা পালন করছে। যা ক্রর্মবর্ধমান ভাবে বাড়তেই থাকবে।”
গিয়াসউদ্দিন বলেন, “শুধু যে ইপিজেড করেছি তা নয়; যেই সিদ্ধিরগঞ্জের জমির দাম ছিলো ৩ থেকে ৪ লাখে সেখানে এখন জমির দাম কাঠা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা হয়েছে এখানে ইপিজেড হওয়ার কারণে। আমি সিদ্ধিরগঞ্জের ইউনিয়ণ পরিষদ ভেঙে দিয়ে পৌরসভা করেছি। যার কারণে এখন এই অঞ্চল সিটি করপোরেশনের আওতায় গেছে। সিটি করপোরেশন এ কারণে সিদ্ধিরগঞ্জকে ঝকঝকে করে সাজাচ্ছে। আর এখানে এখন যেসব কাজ, উন্নয়ণ হচ্ছে তা তো সব সিটি করপোরেশনই করছে, আপনি কোন কাজটা করলেন?”