স্টাফ রিপোর্টার : ত্বকী হত্যাকান্ডের প্রায় এক যুগ পর জড়িতদের গ্রেফতার কার্যক্রম চালাচ্ছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তবে হত্যাকাÐের মাত্র এক বছরের মাথায় অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে র্যাব জানিয়েছিল, রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতে তার ছেলে ত্বকীকে হত্যা করেছে আজমেরী ওসমানসহ ওসমান পরিবারের কয়েকজন এবং তাদের সহযোগিরা। এরপর আর সেই চার্জশীট জমা পড়েনি আদালতে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে থমকে যায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের বিচার কার্যক্রম।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি ত্বকী হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারে সরব হয়েছে র্যাব-১১। ইতিমধ্যেই ৪জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও আনা হয়েছে। যাদেরকে ধরা হয়েছে; ঘটনার পারিপার্শি¦কতায় তারা বিভিন্ন ফরমায়েশ পালন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে, হত্যাকাÐের নির্দেশ দাতা এবং পরিকল্পনাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। ফলে চুনোপুটিদের গ্রেফতার হলেও রাঘোব বোয়ালদের ধরবে কে- সেই প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সন্ত্রাসীদের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান, তার পুত্র অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শামীম ওসমানের ক্যাডার শাহ-নিজামসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তারা দেশে আছেন নাকি দেশ ত্যাগে সফল হয়েছেন- তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা দেশত্যাগ করে থাকলে তাদেরকে আদৌ গ্রেফতার করা যাবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, শুরু থেকেই ওসমান পরিবারের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ছে নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর পরিবার। প্রতি মাসের ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের নেতারাও আলোচিত এই হত্যাকাÐের বিচার দাবির পাশাপাশি তীর্যক মন্তব্য করে যাচ্ছেন ওসমান পরিবারকে নিয়ে। সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অভিযোগও ছিলো ওসমান পরিবারের সদস্যদের প্রতি। হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই হত্যা করা হয়েছে ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। প্রভাবশালী ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নামও উঠে এসেছিল র্যাবের খসড়া চার্জশিটে। এ নিয়ে জল গড়িয়েছে বহু দূর। তবে, খুনের তকমা নিয়ে আজমেরী ওসমানসহ অন্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়নি। তা নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে দেশ বিদেশে।
এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর র্যাব পূনরায় এই মামলার আসামীদের গ্রেফতারে সচেষ্ট দেখা গেলেও নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারীরা ইতিমধ্যেই পালিয়েছে। ফলে তাদের সহযোগিদের গ্রেফতার করা হলেও গডফাদার পর্যায়ের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে নিখোঁজ হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রফিউর রাব্বি। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার হয়। ওইদিন রাতে অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয়। পরে ১৮ মার্চ এমপি শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙ্গারু পারভেজ (বর্তমানে তার কোনো হদিস নেই), জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে একটি অবগতিপত্র দেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই হত্যা করা হয়েছে তার ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র এবং বর্তমান এমপি শামীম ওসমানের ভাতিজার নির্দেশ ও নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলেও সেই সময় র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।