সংবাদচর্চা রিপোর্ট
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত দখল নিতে আবারও গোল পাকাচ্ছে হকার নেতারা। তারা রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে ফুটপাত দখল নিতে দফায় দফায় মিটিং সিটিং দিচ্ছে। এখন শুধু তারা অপেক্ষায় রয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশের। নির্দেশ পেলেই আন্দোলন করবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এক থেকে দেড়শ হকার হকার লীগের বর্তমান ও সাবেক কমিটির নেতারা দফায় দফায় বেশ কয়েকটি মিটিং করেছে। তারা বৃহস্পতিবার ফুটপাত দখল নিতে পুরো প্রস্তুতি নিয়েই চাষাড়া শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন। পরে এখান থেকে হকার নেতারা সাধারণ হকারদের নিয়ে রাইফেল ক্লাবে গিয়েছিলেন সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশনার জন্য।
সূত্রটি আরও জানায়, এদিন হকার নেতাদের সাথে সাংসদ শামীম ওসমান বৈঠকে মিলত হবার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আর রাইফেল ক্লাবে আসেননি। ফলে, হকার নেতারা কয়েকবার রাইফেল ক্লাবে গিয়ে সাংসদকে না পেয়ে ফিরে যান।
তথ্যানুসন্ধানে এবং সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার্স লীগ সভাপতি আ. রহিম মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পলাশ, হকার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল হোসেন, একই কমিটির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সালাউদ্দিন, রনি, মোহাম্মদ জাহিদ, মোহাম্মদ আলী হোসেনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে ১ থেকে দেড়শ হকার শহীদ মিনারে জড়ো হয়। তারা এর আগে নিজদের মধ্যে বেশ কয়েকবার মিটিং করেন। তাদের টার্গেট বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত ফের দখল নেওয়া। আর এর জন্য সাংসদ শামীম ওসমানের দিক নির্দেশনা দরকার। সে লক্ষ্যে তারা সাংসদের সাথে দেখা করার জন্যই শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন। এদিন রাইফেল ক্লাবে সাংসদের সাথে তাদের বসার কথা ছিলো। কিন্তু সাংসদ শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে আর আসেননি।
সূত্র জানায়, হকার নেতারা সাধারণ হকারদের একত্রিত করার কাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার পেলেই তারা ফুটপাত দখলে মাঠে নামবে। এতে যদি ১৬ জানুয়ারির মতো ঘটনাও ঘটে তাতেও তারা পিছ পা হবে না। এমন সিদ্ধান্তই ইতোমধ্যে তারা নিয়ে রেখেছেন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাকেবই তারা এখন অপেক্ষা করছে সাংসদ শামীম ওসমানের দিক নির্দেশনার। তিনি গ্রিন সিগন্যাল দিলেই হকাররা ফুটপাত দখল নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করছে।
তবে, এমন পরিস্থিতিতে সাংসদ শামীম ওসমান হকারদের কী ধরণের নির্দেশনা দেন সেটিই এখন দেখার বিষয়। কারো কারো মতে, শামীম ওসমান এবার আর পূর্বের মতো হকার পক্ষে থাকবেন না এমনকি হকারদেরকে আন্দোলন করতে উৎসাহিতও করবেন না। কেননা, তিনি প্রশাসেনর সাথে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়াবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, এর আগে হকার উচ্ছেদ আর বসানোকে কেন্দ্র করে শহরে যে লঙ্কাকা- যাদের ইন্ধনে ঘটেছিলো। সেই চক্রটি এবারও পর্দার আড়ালে থেকে খেলারামের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শহরে হকার পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে এই চক্রটি বিশেষ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে হকার ইস্যুকেই বেছে নিয়েছে। এতে করে চক্রটি পুলিশ সুপারকে ফাঁদে ফেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে ফুটপাত দখলে হকারদেও চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিলো জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও-টু সাজ্জাদ রোমনের কাছে। তিনি হকারদের সংগঠিত হওয়ার খবরটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তারা কোন উদ্দেশ্য জড়ো হচ্ছে, সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি প্রেসক্লাবে একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসপি হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, ‘একটি পক্ষ প্রহর গুণছে এসপি সাহেব কবে যাবে। ওই পক্ষটি হুমকি দিয়ে বলেছিলো, দুই লক্ষ হকার মাঠে নামানো হবে।’ তাই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী ওই চক্রটিই হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে মাঠে নামতে যাচ্ছে?
অপরদিকে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের ফলে নগরবাসী যারপরনাই আনন্দিত। ফাঁকা ফুটপাতে নির্বিঘœ চলাচল করতে পেরে অনেকেই এসপি হারুনের প্রতি কৃতজ্ঞাতও জ্ঞাপন করেন। এমনকি তার এমন উদ্যোগের কারণে বিভিন্ন মার্কেট মালিক সমিতির লোকজনসহ সাধারণ মানুষ এসপিকে বাংলার সিংহাম হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যানারও সাঁটিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বঙ্গবন্ধু সড়কের হকার উচ্ছেদে মাঠে নেমেছিলেন। সেসময় এই হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে হকারদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের একটি পক্ষ মিশে গিয়ে আইভীর উপর হামলা চালায়। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এ নিয়ে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণিত হয়। রক্তপাতও হয়েছিলো সে সংঘর্ষে। আহত হয়েছিলেন মেয়র আইভী।