আজ রবিবার, ১৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ নিয়ে চুপ !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একটা নতুন শব্দ যোগ হয়। একই দলের হলেও এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ‘লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ নেতা’ বলে ডাকতেন। অনেক দিন পর্যন্ত এ শব্দটি নতুন করে শোনা গিয়েছিলো। ১৯৯১ ও ‘৯৬ সালেও নারায়ণগঞ্জ -৫ আসনে লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্তিত্ব ছিলো। তারা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে দলের ভিতরই। তবে ইদানিং এ নিয়ে আর তেমন কিছু বলেন না ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা।
সূত্র মতে, তৎকালিন সেনা প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারী করেন। এরপর হ্যা-না ভোট দিয়ে গদিতে আসীন থাকেন। এরপর তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রথমে জনদল করলে পরে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ভারত থেকে এসে এ পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৬ সালে নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে সংসদ সদস্য হউন আওয়ামী পরিবারের সন্তান নাসিম ওসমান। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা জানান, ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের জ্যেষ্ঠ সন্তান নাসিম ওসমান লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করার পর থেকেই তার ছোট ভাই শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা লাঙ্গলের পক্ষে কাজ শুরু করেন। এ বলয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যাপিকা নাজমা রহমান (প্রয়াত)। তার নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ না করে তৎকালিন ছাত্র লীগ নেতা শামীম ওসমান বলয় লাঙ্গল নিয়ে জিকির তুলেছিলেন। ‘৮৮’র নির্বাচনেও তাই ঘটেছিলো। যদিও ওই নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করেছিলো। তবে লাঙ্গলে সিল মারতে উৎসাহের কমতি ছিলো কথিত লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ নেতাদের। এমনকি এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ তেও এ আসনে নাজমা রহমানের নৌকা প্রতীকে কাজ না করে লাঙ্গলের দলে ছিলেন তারা। তবে এ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী জয় লাভ করে।
‘৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন আব্দুর রহমান। বর্তমানে তিনি রাজনীতি না করলেও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছেন। তিনি জানান, দলের প্রার্থী নাজমা রহমানের বিরুদ্ধে গিয়েই ক্ষান্ত হননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে তারা লাঙ্গলের পক্ষে জোর করে সিল মেরেছেন। সে কারনেই আওয়ামী লীগ করা সত্তেও ওই বলয়কে লাঙ্গল মার্কা আওয়ামী লীগ বলে জনতা ও নেতাকর্মীরা। সে থেকেই লাঙ্গল জিকির শুরু হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ আসনে লাঙ্গল বিরোধী অবস্থান দেখা গিয়েছিলো। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। আবদুল হাই, সেলিনা হায়াৎ আইভী, আনোয়ার হোসেন, খোকন সাহা লাঙ্গলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি ভিপি বাদলও এবার লাঙ্গলের বিরুদ্ধে দু’চার কথা বলেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে, শহর ও বন্দর মিলিয়ে এ আসনে ৯ম সংসদ থেকে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে করে এখানে দলের ক্ষতি হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম লাঙ্গলের এমপি দেখে দেখে বড় হচ্ছে। তাদের এই সব কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কাছে পৌছে দেয়া হয়। তবে রাজনৈতিক কৌশলের কারনে শেষ পর্যন্ত এ আসনে জাতীয় পার্টিকেই ছেড়ে দেয়া হয়। সূত্র মতে, দেশ স্বাধীনের পর সর্ব প্রথম ১৯৭৩ সালে সংসদ নির্বাচন হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ৫ বার। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ – ৫ আসনে নৌকার এমপি দুইবার। বাকী তিনবার জাতীয় পার্টির অর্থাৎ লাঙ্গল মার্কার সাংসদ পেয়েছে শহর ও বন্দরবাসী।