নিজস্ব প্রতিবেদক:
হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় দুই নেতার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য যাচাই করেছে পুলিশ । মাদ্রাসাছাত্র ও রোহিঙ্গাদের জন্য প্রবাসীদের পাঠানো টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করেছেন ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি হেফাজতে ইসলামের নেতারা। পুলিশ জানায়, এসব অর্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যবহার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম রোববার ৩০ মে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব বলেন।
মাহবুব আলম বলেন, হেফাজতের অর্থায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গভীরভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নথিপত্রগুলো যাচাই করছেন। হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক গ্রেপ্তারের পর তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এক বছরে প্রায় ছয় কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি হেফাজতের অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমীও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার ব্যাংক হিসাবের তথ্যও যাচাই করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সাধারণত প্রবাস থেকে রোহিঙ্গা বা মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য দান করা হয়। হেফাজতের জন্য কিছু কিছু টাকা আলাদা আসে। এ টাকাগুলো তাদের যে অ্যাকাউন্টে আসে, সেগুলোর হিসাব সঠিকভাবে রাখা হয় না। কোনো স্বচ্ছতাও নেই। নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন এবং খরচ করে থাকেন। দেখা যায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে মাদ্রাসার টাকা হেফাজতের কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন। কিংবা রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো টাকা তাদের মতো ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ টাকা তারা তছরুপ করেছেন বা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। এগুলো দিয়ে তারা বাড়ি-গাড়ি করছেন। বিভিন্ন ধরনের ‘শানশওকতে’ তারা থাকছেন।
মাহবুব আলম বলেন, এ ছাড়া মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে বেফাক কিংবা হাইয়াতুল উলিয়ার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন রয়েছে। কিন্তু এ সংগঠনগুলো জিম্মি হয়ে গেছে। এগুলোকে নিজেদের স্বার্থে তারা ব্যবহার করছে। ফলে এ সংগঠনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এখানেও অর্থ একটা বিষয়।
তিনি বলেন, যাদের একবার অর্থ হয়ে যায় বা এ ধরনের অর্থ চলে আসে বা যারা অর্থের নিয়ন্ত্রক, তারাই কিন্তু রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের পরিকল্পনামাফিক রাজনৈতিক কারণেই টাকাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিজেরাও টাকার মালিক হচ্ছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক বড় বড় আলেম ওলামা আছেন, যারা এ সিন্ডিকেটের কারণে ঢুকতে পারছেন না। তারা অনেক বড় আলেম, অনেক বুজুর্গ লোক আছেন। এ সিন্ডিকেটের কাছে তারা অসহায়।’
প্রসঙ্গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন মনির হোসেন কাসেমী। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানের প্রতিপক্ষ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছে মনির হোসেন কাশেমী।