আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত

নবকুমার:

রূপগঞ্জে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩ তম জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। শনিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কেক কাটার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল ভূইয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা। পরে গোলাম দস্তগীর গাজী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কেক কাটেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে এক আলোচনা সভায় গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্পন্দন। তাকে বাংলাদেশের ফুসফুস বললেও ভুল হবে না। কারণ শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা পেয়েছে। তার দক্ষ নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র বদলে গেছে। বাঙালি জাতি ভিক্ষুকের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২১ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি জামায়াত । তারপরও প্রিয় নেত্রী থেমে যান নি। তিনি মৃত্যু উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া রূপগঞ্জ বাসির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,ভূলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আরিফুল হক, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: বজলুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভুঁইয়া মাসুম, ভিপি সাইফুল ইসলাম তুহিন, জিএস সাদিকুল ইসলাম সজীব সহ অনেকে।

প্রসঙ্গত  শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মত নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন।

দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে মধুমতি নদীর তীরবর্তী গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে চলে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।

বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩, নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তার শহর বাসের পালা।

তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশংকা ও দুঃসহ দুঃখ-যন্ত্রনা।

এই ঝড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড.ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

 

সর্বশেষ সংবাদ