আজ শনিবার, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে জুয়ার আসর

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মর্তুজাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকায় পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জুয়ার আসর জমে। দিন-রাত চলে এ জুয়ার আসর। সোনাব গ্রামের আমির হোসেনের পুকুরপাড়ের ডেরায় চলে এ জুয়ার আসর। জুয়ার আসরে আসা-যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে শুধু জুয়ারিরা আসা-যাওয়া করে। জুয়ার আসরেই চলে খাওয়া-দাওয়াও। ওই স্পটের পাশে কয়েক হাজার বিরিয়ানীর খালী প্যাকেট ও শত শত বাণ্ডিল তাস পরে রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশ পেয়ে থাকেন মোটা অংকের টাকা। এ তথ্য জুয়ারি ফর্মাদের। এ আসরের নিয়োজিত ৮জন ফর্মা রয়েছে। প্রতি ৬ ঘন্টা অন্তর ফর্মাদের ডিউটি পরির্বতন হয়। তারা মর্তুজাবাদ দক্ষিণপাড়া দোকানের পাশে ও আউখাবো নামা সড়কে বসে থাকে। র‌্যাব, পুলিশ বা সন্দেহজনক লোক দেখলেই জুয়াড়িদের ফোনে তথ্য জানিয়ে সর্তক করে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৩০-৩৫জন জুয়ারি এ আসরে যুক্ত হয়। দিনভর চলে শত শত টাকার আসর। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত অন্তত ১০ লাখ টাকার খেলা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলেই হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। মর্তুজাবাদ দক্ষিণপাড়া গ্রামের মন্টুর ছেলে কাদির, সিরাজল ইসলামের ছেলে ইকবাল, তালুকদারের ছেলে আফজাল, বোবির ছেলে আবু তাহেরসহ ৮জন ফর্মা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। তাদের ৬ ঘন্টা ডিউটি করলে জনপ্রতি ৫০০ টাকা দেয়া হয়। এ জুয়ার আসরের পাশেই চলে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন। এ আসরের ফর্মারাই মাদক বেচাকেনার সাথেও জড়িত। সম্প্রতি মাদক বিক্রেতা ও ফর্মা আবু তাহের নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। জেলহাজত থেকে বেরিয়ে পুনরায় মাদক পেশায় জড়িয়ে পরে।
ফর্মা আফজাল জানায়, ফাঁড়ি পুলিশ জুয়ারিদের পকেটে থাকে। এলাকাবাসী অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হবে না। জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন পুলিশ ফাঁড়িতে ৫ হাজার টাকা দেই। তাই অভিযোগের পরেও জুয়ার স্পটে পুলিশ আসে না। তাছাড়া আমরা (জুয়ারি) রাতভর সজাগ থেকে এলাকা পাহারাও দেই। তবে জুয়ারিরা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি করে না। ছিনতাই গ্রুপের একটি দল আছে।
উপজেলার মর্তুজাবাদ দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি হাজী সায়েদ আলী জানান, কোনোভাবেই মাদক ও জুয়ারি মুক্ত সমাজ গড়তে পারছি না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেও হামলার শিকার হতে হয়। তাই জেনেও কেউ প্রতিবাদ করতে যায় না। শুনেছি পুলিশকে ম্যানেজ করেই নাকি তারা মাদক ও জুয়ার আসর জমায়। এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, জুয়ার আসর থেকে পুলিশের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তাছাড়া পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি ও জুয়ারিদের গ্রেফতার করছে। অভিযান চালিয়ে জুয়ারিদের যাতায়াতের বাঁশের সাঁকো ও জুয়ারীদের ডেরা ভেঙে দেয়া হবে। জমির মালিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া করা হবে। জুয়ারিদের সহযোগিতা এবং ফর্মাদের গ্রেফতারেও পুলিশ তৎপর রয়েছে। এব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান সংবাদচর্চাকে বলেন , জুয়ার আসর বসে আমার জানা নেই। ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে। যেকোনো সময় পুলিশ অভিযানে যাবে।