সংবাদচর্চা রিপোর্ট
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে দেশটির সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলায় গ্রেফতার রায়হান কবিরের পরিবারের লোকজনের দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়। ছেলের গ্রেফতারের খবর শোনার পর থেকে কেঁদেই চলছেন মা রাশিদা বেগম। কিছুক্ষণ পরপর মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি। এদিকে কীভাবে কী করতে হবে ভেবে পাচ্ছেন না বাবা মো. শাহ্ আলম। সসম্মানে সুস্থভাবে ছেলেকে দেশে ফেরত চান বাবা-মা। এতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
শাহ্ আলম জানান, ছেলের গ্রেফতারের খবর শুনে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রায়হানের মা। তার অবস্থা সংকটাপন্ন জানালেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল যায় যায় অবস্থা রায়হানের মায়ের। পরে ডাক্তার আইনা স্যালাইন দেয়ার পর কিছুটা ঠিক আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রায়হান কবিরের মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘শেষ কথা হইসে বৃহস্পতিবার। আর কোন কথা হয় নাই। না জানি ছেলে আমার কেমন আছে। আমার ছেলে যেন সুস্থভাবে আমার বুকে ফেরত আসে সেটাই আমি চাই। প্রধানমন্ত্রী যেন আমার ছেলেরে ফিরাইয়া আনার ব্যবস্থা করেন।’
গণমাধ্যম মারফত রায়হান কবিরের বাবা শাহ্ আলম জেনেছেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তাকে ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে ধারণা নেই তার। তিনি বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। সকালে যাই, রাতে ফিরি। আমার তো চেনা-জানা কেউ নাই। আপনারা আর আল্লাহই কেবল ভরসা। রাতভর এবাদত করতাছি। আমার ছেলে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সোনালী মা’ বলে ডাকে। তাহলে ‘সোনালী মা’ কেন তার ছেলের পক্ষে দাড়াবে না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি কিছু করতে পারেন তাহলে তিনি যেন কিছু করেন। নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব করা আমার ছেলে যেন সুস্থ ও সম্মানের সাথে আমাদের কাছে ফিরে আসে সেটাই চাই।
গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারীতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন রায়হান কবির। এরপর গত শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
রায়হানের পক্ষে মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন, লড়বেন দুই আইনজীবী
রায়হান কবিরের পক্ষে সরব অবস্থান নিয়েছে খোদ মালয়েশিয়ারই একটি মানবাধিকার সংগঠন। ল’ইয়ারস ফর লিবার্টি (এলএফএল) নামের ওই সংগঠন রায়হানের গ্রেফতারকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছে। অবৈধ পথে তার অভিবাসন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে তারা। রায়হানকে আইনি সহায়তা দিতে লড়বেন সুমিতা সানথিনী ও সেলভাারাজা চিন্নিয়া নামে মালয়েশিয়ার দুই আইনজীবী।
তবে একজন বাংলাদেশির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করার জের ধরে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশ কোনো ধরনের বিরোধে যাবে না বা ক‚টনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করবে না বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি মনে করেন, প্রবাসীরা যে দেশে অবস্থান করেন সে দেশের আইন মেনে চলা তাদের দায়িত্ব।
প্রসঙ্গত, রায়হান কবিরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কদমরসূল অঞ্চলের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ এলাকায়। স্থানীয়দের মাঝে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিতি ছিল রায়হান কবিরের। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল সর্বদা সোচ্চার। দেশে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রায়হান নিজের বই ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের।