আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রমজানে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীরা, ব্যর্থ নাসিক

 নাসিক থেকে দাম নির্ধারণ করলে তা কার্যকর হয় না- প্রধান নির্বাহী
 সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার ফল আমাদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে- ভোক্তা
 মাংসের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ কতিপয় চাঁদাবাজ- বিক্রেতা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
রমজান মাসের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ প্রথম রোজা আজ। অথচ নগরীতে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি মাংস, সবজি ও দ্রব্যমূল্যর দাম। যে কাজটা করার কথা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক)। অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। নাসিকের কোন কর্মকর্তার সাথে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলের কোন বৈঠক হয়নি। যার কারণে রমজানে দ্রব্যমূল্যর দাম এখানো পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মহল। এমনটাই মনে করেন জেলার সচেতন মহলের লোকজন।

সরেজমিনে দ্বিগু বাবুর বাজার সহ নগরীর বেশ কয়েকটি মাংসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে গরুর মাংস বিক্রী করা হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা দরে। অথচ সচারাচর বাজারে যে মাংস বিক্রী করা হয় ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রী করা হচ্ছে ৭৮০ টাকা দরে। অন্যান্য সময় যা বিক্রী হয় ৭৫০ টাকায়। এছাড়াও পূর্বের চেয়ে বেশি দামে বিক্রী করা হচ্ছে ভেড়া, ছাগল ও মুরগীর মাংস।

বাজারে মাংস ক্রয় করতে আসা ক্রেতারা জানায়, শুধু রমজান মাস নয় বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই মাংসের দাম বাড়ানো হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তারা উপলক্ষ্য গুলোতে মাংসের দাম বাড়ায় কিন্তু আমাদের বেতন তো উপলক্ষ্যতে বাড়ে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি এসকল বিষয়গুলো না দেখে তাহলে আমরা কোথায় যাবো? এক সপ্তাহ আগে গরুর মাংসের দাম ছিলো ৫০০ টাকা সেখানে রমজানকে কেন্দ্র করে এখন মাংসের দাম সাড়ে পাচঁশ টাকারও উপরে। এছাড়াও বাড়ানো হয়েছে খাসি, ভেড়া, ছাগল ও মুরগীর মাংসের দামও। যারা বাজার তদারকির সাথে সম্পৃক্ত তাদের ব্যর্থতার ফল আমাদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এটা নগরবাসীর জন্য খুবই দূর্ভগ্যজনক।

অন্যদিকে মাংস বিক্রেতারা জানায় ভিন্ন কথা। তারা বলেন, মাংসের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো বিভিন্ন হাটের কতিপয় চাঁদাবাজদের উৎপাত। তাদের কারণেই গরুপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হয়। সাধেই তো আমরা মাংসের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি রাখছি না। লোকসান দিয়ে তো আর আমরা ব্যবসা করতে পারবো না। আমরা সততার সাথে ব্যবসা করি। ক্রেতাদের ঠকিয়ে আমাদের কোন লাভ নেই। তবে ওই কতিপয় চাঁদাবাজদের উৎপাত বন্ধ করা গেলে মাংসের দাম কমে আসবে।

রমজান উপলক্ষে মাংসের দাম নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চেয়ে নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এহেতেশামুল হককে মুঠোফোন করা হলে তিনি বলেন, রমজান মাসে তো কোন সময়ই দাম নির্ধারণ করা হয় না! নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাংসের দাম কেনো কোন কিছুরই তো দাম নির্ধারণ করা হয় না। কারণ নাসিক থেকে দাম নির্ধারণ করে দিলে তা কার্যকর হয় না। দাম নির্ধারণ করে তো কার্যকর করতে হবে। ভোক্তা যারা তারা তো আমাদেরকে সহযোগীতা করে না, অন্যদিকে ক্রেতারাও করেনা। তাহলে কিভাবে কার্যকর হবে? আমরা কাজ করলেও কোন ফল পাচ্ছি না। জণগনের যে সহযোগীতা অর্থ্যাৎ জণগন হচ্ছে দুই ধরনের একটি পক্ষ ভোক্তা আরেকটি বিক্রেতা। তাদেরও তো সহযোগীতা প্রয়োজন।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক কেনো কি জন্য? তবে ব্যবস্থা আমরা ঠিকই নেই কিন্তু কোন কাজ হয় না। এজন্য আমরা নিরুৎসাহিত হই।

সচেতন মহলের মতে, সকল ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্টদের তৎপর থাকা জরুরী। সেদিক দিয়ে নাসিকের কর্মকর্তাদের কখনোই দায়িত্বে অবহেলা করতে দেখা যায় না। তবে রমজানকে কেন্দ্র করে নগরীর ব্যবসায়ী মহল ও ভোক্তাদের সাথে আলোচনা করে মাংসের দাম নির্ধারণ করা উচিৎ ছিলো।