আজ শনিবার, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে কারণে সব রোহিঙ্গাকে রাখা যাচ্ছে না ডিপ্লোম্যাট নিবন্ধনে, জয়

যে কারণে

যে কারণেসংবাদচর্চা ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণেই বাংলাদেশ সব রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে পারছে না।

তাছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনও ধনী দেশ নয়। তাই প্রায় নিঃস্ব ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটে শুক্রবার এক নিবন্ধে তিনি এসব মন্তব্য করেছেন।

জয় লিখেছেন, গত আগস্ট থেকে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইনের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আগের বছরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লাখো রহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দিয়েছে তারা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সম্প্রতি সম্মত হয়েছে দুই দেশ।

জয় লিখেছেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিশ্ব নেতারাও এর প্রশংসা করেছেন। নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে শরণার্থী শিবিরগুলোকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে, সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সেবার মান উন্নত করা হয়েছে। নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করছে। রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশের এসব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বনেতারা।

সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের মধ্যেই সীমিত রাখা ও তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। এর মানে এই নয় যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি আছে। বরং বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়েই এই নীতি নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হত্যার অভিযোগে দেশটির সামরিক বাহিনী অন্যায় ও নিষ্ঠুর এ দমন অভিযান শুরু করে। আইএস ও আল কায়দার সঙ্গে আরসার যোগসূত্র আছে বলে অভিযোগ থাকলেও তারা তা অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে বলে দাবি করে থাকে।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোতের সঙ্গে সশস্ত্র আরসা সদস্যরাও ঢুকে পড়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলো উগ্রবাদের চারণভূমি হয়ে উঠতে পারে। এটাই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কার বিষয়। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে বিশ্নেষক রিচার্ড হরসে লিখেছেন, যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি হতাশাজনক পরিস্থিতি উগ্রবাদীদের নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য সহায়ক। এর মাধ্যমে তারা তাদের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে চায়। হরসে আরও লিখেছিলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন নতুন সদস্য খুঁজে পেতে আরসা সদস্যদের তেমন কোনো কষ্টই করতে হবে না।

হরসের এই আশঙ্কার সঙ্গে সহমত পোষণ করে জয় লিখেছেন, এ কারণেই রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে সারাদেশে চলাচল করতে দিতে পারে না বাংলাদেশ। মিয়ানমার সীমান্তে কিংবা বাংলাদেশের ভেতরেই সন্ত্রাসী হামলার জন্য উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলো নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে না, সেই নিশ্চয়তা তো সরকার দিতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা লিখেছেন, এর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর মর্যাদা দিয়েছে (এ সময় আশ্রয় নিয়েছিল ৪ লাখ রোহিঙ্গা)। কিন্তু ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলে তা এক ধাক্কায় দেশের জনসংখ্যা এক শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। এই সংখ্যাকে খুব বড় মনে না হলেও একই ধরনের জনসংখ্যার স্রোত অনেক দেশেই অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাঠামোর সবচেয়ে নিচের স্তরে বসবাস করছেন, যেটা বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা জালের ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

জয় লিখেছেন, বাংলাদেশ তার দ্রুত উন্নয়নের জন্য গর্বিত। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের জিডিপি ৭ শতাংশ হলেও আমরা ধনী দেশ নই। এই দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করা সম্ভব। সেটা এ দেশ করছেও। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিলে তা দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সবার জন্য যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।

জয়ের নিবন্ধে বলা হয়, রোহিঙ্গা ছাড়া আর প্রায় কেউই বাংলাদেশে অভিবাসী হিসেবে আসতে চায় না। ফলে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসনের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা বাংলাদেশের নেই। বাবা কিংবা মায়ের যে কোনো একজন বাংলাদেশি হলে কিংবা বাংলাদেশি কাউকে বিয়ে করলেই শুধু এখানে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। তাছাড়া বাংলাদেশে জন্ম নিলেও নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে, অভিবাসী কিংবা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনো আইনি সুযোগ নেই।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো দুটি সাংঘর্ষিক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার কাজ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবে এবং তাদের প্রত্যাবাসনের সময়ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করবে। তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে সরকারকে।