সংবাদচর্চা রিপোর্ট
বহু নাটকীয়তার পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির পাশে জায়গা করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেই সমালোচিত আল জয়নাল। এক সময় তাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবেই বিভিন্ন কর্মকান্ডে দেখা যেত। সম্প্রতি ওই আসনে নিজে জাতীয় পার্টির মনোনয়ণ প্রার্থী ঘোষণা করে সে। এরপর থেকেই সাংসদের সাথে তার টানা পোড়েন শুরু হয়। সাংসদের পাশে থেকে তার বিভিন্ন অপর্কম গোপন থাকলেও বর্তমানে তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
জানা গেছে, আল জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ। মন্ডলপাড়ায় সরকারি খালের উপর তিনি অবৈধভাবে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কয়েকবার তোড়জোড় করলেও পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে প্রায় ২শ ফিট খাল ছিল এক সময়। কিন্তু বর্তমানে সেই খাল আর খাল নেই। ২০ ফিটের একটি ড্রেন নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। প্রভাবশালী হওয়ায় আল জয়নালসহ কয়েকজন ভূমিদুস্যর দখলকৃত খালের জায়গা উদ্ধার করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম এহতেশামুল হক বলেন, আমরা খালের দুপাশে পাকা করে বাঁধ তৈরী করেছি। সিমেন্টের মাঝে পরিবেশ বন্ধব কিছু হোল রেখেছি। কেউ যদি জায়গা দখল করে রাখে তবে আমরা জায়গা মেপে দেখব। ভূমি দখল করলে তাদের শিগ্রই উচ্ছেদ করা হবে।
বেশ কিছুদিন আগে আল জয়নালের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় কাতার প্রবাসীর স্ত্রী জোরপূর্বক ভূমিদখলের অভিযোগ করেন। সুরাইয়া বেগম নামের ওই মহিলাকে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছিলেন। সুরাইয়া ফতুল্লার হরিহর পাড়া গুলশান রোড এলাকার আব্দুল ওয়াহাবের স্ত্রী। অভিযোগে তিনি বলেন, চর বক্তাবলী মৌজার সিএস ১৭৪৪, এসএ ১৮১৭, আরএস ২৬৫৩ মোট ১৪ শতাংশ জমি টানবাজারের চিহ্নিত ভূমিদস্যু আল জয়নাল সন্ত্রাসীদের পাঠিয়ে নিজের জমি বলে দাবী করেন। আল জয়নাল ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সস্তাপুরের হারুন অর রশীদকে ভাড়া করেন।
এছাড়া এ বছরের ৪ এপ্রিল নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতার দায়ে আল জয়নালসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওপেন্দ্র চন্দ্র সাহা অভিযোগ করেন আল জয়নাল তার পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করেছেন। সে ভূয়া ওয়ারিশ দাবী করে তাদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিযুক্ত করেন।
এর আগে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মঞ্জুর কাদেরকে হুমকি দেয় সেই আল জয়নাল। পীর জাকির শাহ নামের এক ব্যাক্তির জন্য কাদেরকে সে হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় মঞ্জুর কাদের বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি জিডি করেন। তারা ওসিকে বদলী করাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জামায়াত শিবিরের একটি মামলায় আল জয়নালকে আসামী করা হয়। জামায়াতের অর্থ জোগান, মদদ ও সংগঠিত করার কাজে সে নিয়োজিত বলে জানায় পুলিশের একাধিক সূত্র।
২০১৫ সালে ভূমিদখলের একটি মামলায় আল জয়নালকে আদালত কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা বাদী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির বর্তমান সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল।
সেই আল জয়নালকে দেখা গেছে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভির পাশে। নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং ঘাট এলাকাতে বন্দর কদমরসুল সেতু নির্মাণে একনেকে প্রকল্প পাশ হওয়ায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে অভিনন্দন জানিয়ে শহরে প্রচারণা চালায় সেই আল জয়নাল।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানসহ বন্দর সেন্ট্রাল ঘাট এলাকাতে ওই প্রচারণার ফেস্টুন দেখা গেছে। সেখানে মেয়র আইভীর ছবি ও জয়নালের ছবি ছিল।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোশকতায় বেড়ে উঠেছেন জয়নাল। তাঁর বিরুদ্ধে আছে ভূমিদস্যুতার একাধিক অভিযোগ। আছে জামায়াত ও শিবিরকে পৃষ্ঠপোশকতার অভিযোগও।
সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী আল জয়নাল বলেছেন, আমাকে জামায়াতে ইসলামী বানাতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছিল, তারা সফল হয়নি। একটি ক্ষমতাধর চক্র আমাকে জামায়াত শিবির ও নাশকতার মামলায় জড়িয়ে ছিল। আমি এ ব্যাপারে এসপি’র সাথে কথা বলেছিলাম, যে যদি আমি জড়িত হই আমাকে শাস্তি দিন। আমি কখনো তাতীঁ লীগের কোন পদে ছিলাম না, কোন কমিটিতেও ছিলাম না। আমাকে বেকায়দায় ফেলতেই তাতীঁ লীগের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ছোটখাটো ব্যবসা করে আমি মানুষের সেবা করে যাচ্ছি, সে সেবাকে আরো বৃদ্ধি করার লক্ষে আমি ৩০ মে এরশাদ সাহেবকে ফুল দিয়ে যোগ দিয়েছি।