আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গল্পের নাম মুক্তি চাই

মুক্তি

গল্পের নাম মুক্তি চাইমুক্তি নবকুমার:

আমি তখন সপ্তম শোণীতে পড়ি।আমার গ্রামের নাম শোষণপুর ।আমার একমাত্র প্রতিবেশী মফুজিল মিঞা। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সী সালেহা কে বিয়ে করে ঘরে তুলে। শ্রমিক মফিজুল পেশায় ছিল রিক্সা চালক। সালেহার বাবা তাকে যৌতুক স্বরূপ কুড়ি হাজার টাকা ও একটি রিক্সা কিনে দিয়েছিল। তাও সুদের উপড় ঋণ করে।

দুশ্চরিত্র মফিজুল অল্প দিনের মধ্যেই সালেহার বাবার দেওয়া সকল টাকা খরচ করে ফেলে, এমনকি উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম রিক্সাটি ও বিক্রি করে দেয়। সালেহা খাতুনের কপালে নেমে আসে কলির সন্ধ্যা। সংসারে অভাব অনটন বাড়তে থাকে,ঠিকমত তিনবেলা খাওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে মফিজুল গায়ে ফু’দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর সালেহা খাতুনকে চাপ দিতে থাকে তার বাবার বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য। অসহায় অবলা সালেহা খাতুন সব কিছু নিরবে নিশ্চুপ হয়ে সহ্য করে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে মফিজুলের অত্যাচার।

ঝাড়ু থেকে শুরু করে রান্না করার কাঁঠি পর্যন্ত এমন হীন কোন জিনিস বাদ ছিল না যা দিয়ে সালেহা কে প্রহার করেনি! অপর দিকে সালেহা খাতুনের বাবার অভাবের সংসার নুন আন্তে পান্তা ফুঁড়ায়। অন্য মানুষের ক্ষেত-খামারে কাজ করে দিনাতিপাত করে। তাই যতই নির্যাতন করুক না কেন সালেহা তার বাবার বাড়িতে যায় না। প্রতিবার প্রহারের সময় সালেহা খাতুন একটি নিদিষ্ট বাক্য বলে প্রতিবাদ করত ” মোরে মুক্তি দে,মুই তোর থেইকা মুক্তি চাই” এই বাক্যটির প্রতিটি শব্দে কতশত ঘৃণা অভক্তি মাখা ছিল তা একমাত্র সালেহার অন্তর্জামী জ্ঞাত। আর এই মুক্তি দিয়ে সালেহা কোন ধরনের মুক্তির কথা বুঝাত,একমাত্র সেই ভালো ভালো জানত।

অবশ্যই মুক্তি তার একদিন মিলেছে বটে সেটাও মফিজুলের হাতে নয়,বিশ্ব মুক্তি দাতার ঈশারায়। বৈশাখের এক ঝড়ো সন্ধ্যায় সালেহার প্রচন্ড জ্বর হয়। জ্বরনাশ ধীরে ধীরে জমের রূপধারন করে। অযত্নে অবহেলায় পরদিন সন্ধ্যায় সালেহার প্রাণবায়ু দেহখাঁচা ত্যাগ করে চির মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করে।

আর কত মৃত্যু হলে যৌতুকের হাতে থেকে মুক্তি পাবে সালেহার মত মানুষরা? শিক্ষা,চিকিৎসা,নিয়োগ বাণিজ্য হতে মুক্তি চাই। আসুন সবাই মিলে শোষণ মুক্ত সমাজ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হই। যৌতুক কে না বলি,যৌতুক মুক্ত সমাজ গড়ি।

মাহিদ অাল মুসা
বাংলা বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ,ঢাকা।