আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মশার উৎপাত সাথে পানি সঙ্কট নগরবাসী যন্ত্রনায় অতিষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চৈত্র মাস শেষের দিকে। গ্রীস্মের খড়তাপ এখনো শুরু হয়নি। প্রচন্ড গরম শুরু হওয়ার পূর্বেই নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে মশার উৎপাত সাথে ওয়াসার পানি সঙ্কট। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকেও এনিয়ে নানা আলোচনা। বেশ কয়েকদিন ধরে ফেইসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপগুলোতে মশার উৎপাত নিয়ে পোষ্ট দেয়া হচ্ছে।
নগরবাসী বলছে, মশার উৎপাত কি কম ছিল যে ওয়াসা পানি না দিয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। উভয় সঙ্কটে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শীত শেষ হওয়ার পরপরই নগরীতে মশার অত্যাচারে অস্থির হয়ে উঠে নগরবাসী। দিন নেই, রাত নেই প্রতি মুহুর্তেই চলছে এর অত্যাচার। বাসাবাড়ি, অফিস, খেলার মাঠ সর্বত্রই মশা আর মাছির উপদ্রব। মশার অত্যাচারে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতালগুলোও। এবার মশার উৎপাত এত বেশি যে কয়েল, স্প্রে, মশা মারার ব্যাট কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মশার কামড়ে যেমন অতিষ্ট নগরবাসী। তেমনি বাড়ছে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও। তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত মশা নিধনে অভিযান চলছে। ঝড় বৃষ্টির সময় শুরু হয়েছে। তারা আশা করছেন কয়েক দিনের মধ্যে মশার উপদ্রব কমে।
মশার উপদ্রবের সাথে যুক্ত হয়েছে ওয়াসার পানি সঙ্কট। গত দুই দিন ধরে শহরের ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া, দেওভোগ ও শীতলক্ষা এলাকায় ওয়াসার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ওয়াসার পানি দিনে দুই বার দেয়। তারপর মাঝে মাঝে এতো দূর্গন্ধ ও ময়লা পানি থাকে তা ব্যবহার উপযোগী। তবে গত ৭ ও ৮ এপ্রিল দুই দিন ধরে ওয়াসার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিকল্প উপায়ে পানির ব্যবস্থা করে দিন চলছে বলে জানান এলাকাবাসী।
দেওভোগের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন জানান, দিন নেই, রাত নেই সব সময়ই এখন মশা কামড়ায়। বাসা বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। বাধ্য হয়ে দিনের বেলায় কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। তারপরও মশা কমছে না।
পাইকপাড়ার গৃহিনী রোকসানা আক্তার জানান, গত দুই দিন ধরে পানি দেয় না ওয়াসা। এর আগে যাও দিতো প্রায়ই সময় দূর্গন্ধযুক্ত ও ময়লা পানি দিতো। পানি ছাড়া দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে।
মহসিন আলম নামে এক ফেইসবুক ইউজার লিখেছেন, মশার বাম্পার ফলনে নারায়ণগঞ্জবাসী ধন্য। নারায়ণগঞ্জস্থান নামক ফেইসবুক গ্রুপের এডমিন তাদের গ্রুপে পোষ্ট করেছে, জনগণ- মশার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর সমাধান আছে কি? নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি- কেন নয় -কামড় সহ্য করবা দৃঢ় মানসিকতা রাখুন।
জানা যায়, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রনায় শান্তিতে কাজকর্ম করা তো দুরের কথা ঠিকমতো স্থির হয়ে বসা পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছেনা।
এদিকে গত পহেলা মার্চ নারায়ণগঞ্জের সকল ওয়ার্ডে থেকে দ্বিতীয় দফায় মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচীতে ১ মার্চ ১৮ নং ওর্য়াড, ৩ মার্চ ১৭ নং ওর্য়াড, ৪ মার্চ ১৬নং, ৫মার্চ ১৫ নং ওর্য়াডসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত মশক নিধন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬নং ওয়ার্ডের চারুকলা ডাম্পিং স্পটগুলোতে ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কীটনাশক ও এলডিও ছেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া ১ মার্চ থেকে সিটি কর্পোরেশন জোনাল অফিস, ৩ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসকের অফিস, ৪ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন, ৫ মার্চ ম্যাজিস্ট্রট কোয়ার্টার, ৬ মার্চ র‌্যাব অফিস,পুরাতন কোর্ট, ৭ মার্চ এসপির বাসভবন, ৮ মার্চ জেলা জজের বাসভবন, ১০ মার্চ জেলা কারাগার এবং ১১ মার্চ পঞ্চবটি সিটি পার্ক এ মশার কীটনাশক ছেটানো হবে বলে ও জানা গেছে।
কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের এত ব্যবস্থা নেয়ার পরও মশাবাহিনীর হাত থেকে নিস্তার মিলছেনা। এমনটাই অভিযোগ নগরীর সাধারণ মানুষের।
তারা বলছে, মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিকাল হলেই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তারপর মশার হাত থেকে নিস্তার নেই।
এ বিষয়ে নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, মশার উপদ্রবটা একটু বেশি। আমাদের কর্মসূচি চলতেছে।
তিনি আরও জানান, ঝড় বৃষ্টি চলতেছে মশা কমে যাবে। তারপরও প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিধনে আমাদের লোকজন কাজ করছে।
পানি না থাকা প্রসঙ্গে ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ওয়াসা য়ে পানি দেয় তা খাওয়ার উপযুক্ত না। আর দুই দিন তো প্রায়ই সময় ওয়াসা পানি বন্ধ রাখে বিনা নোটিসে। এলাকাবাসী পানি নিয়ে সঙ্কটে যাতে না থাকে আমি এলাকায় ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে দিয়েছি। আপাতত এলাকাবাসী আমার সরবরাহকৃত পানিই ব্যবহার করছে।
তবে পানি সঙ্কট বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মডসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাথে সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ