আজ বৃহস্পতিবার, ১০ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভুলে গেছে নাজমা রহমানের নাম !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের যে ক’জন রাজনীতিক সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। বাম ঘরাণার হাত ধরে রাজনীতি শুরু হলেও দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। এরপর শহর আওয়ামীলীগের সম্পাদক, সভানেত্রি পরে জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক শেষে ২০০১ পর্যন্ত জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ পান। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মারাত্মক আঘাত পান তিনি। এরপর নানা রোগে আক্রান্ত হন। শেষ পর্যন্ত ক্যানসারে ভুগে ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট আমেরিকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ৬ মাস পর পর আমেরিকায় যেতেন চিকিৎসা নিতে। সেখানে তার মেয়েরা বাস করেন। নারায়ণগঞ্জের অগ্নিকণ্যা খ্যাত সেই নাজমা রহমানকে গতকাল স্মরণ করেনি তার দল।
১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পান নাজমা রহমান। তবে দলের ভিতর থাকা লাঙ্গল মার্কা আওয়ামীলীগারদের অসহযোগীতার কারনে তিনি জয় পাননি বলে জানান দলের একাধিক প্রবীণ নেতা। ‘৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নাজমা রহমান ছিলেন সংগ্রামের প্রাণ। তখন উত্তরপন্থি আওয়ামীলীগের নেতা ও তাদের অনুগতরা লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতেন। আর দক্ষিণ বলয়ের নেতাকর্মীরা এক হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতেন। নাজমা রহমানের বক্তব্য শুনে তাকে নারায়ণগঞ্জের অগ্নিকণ্যা বলে ডাকতেন অনেকে।
সূত্র মতে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে নাজমা রহমান কে বেদম লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ওই মিছিলে একটি কাঁদানে গ্যাস সিলিন্ডার তার মাথায় লাগায় তিনি মারাত্মক আহত হন। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময়ে তার পায়ে কয়েকটি স্পিন্টার আঘাত করে। এরপর থেকে তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হন।
মৃত্যুর কিছু দিন আগে এ প্রতিবেদকের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে নাজমা রহমান জানিয়েছিলেন, তিনি ৬ মাস পর পর আমেরিকায় গিয়ে মেয়েদের কাছে থাকেন আর চিকিৎসা নেন। তিনি যখন তার এমন অসুস্থতার কথা বলছিলেন তখনও মোবাইল ফোনের এ প্রান্ত থেকে তার হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠছে। কথা বলার সময়ে তিনি একটু বুঝতে দেননি, তিনি কষ্টে আছেন। বরং নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন সাংবাদিক ফোন করায় তিনি খুব খুশী হয়েছিলেন। অধ্যাপিকা নাজমা রহমানকে সাধারণ মানুষ ভুলেনি। তবে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতারা তাকে মনে রাখেনি। গতকাল তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলীয়ভাবে কোন কর্মসূচী পালন হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার স্ত্রী জানান তিনি অসুস্থ। জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদির জানান, নাজমা রহমানকে স্মরণ করা দরকার ছিলো। জেলার সভাপতি সেক্রেটারী হয়তো ভুলে গেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কেউ কাউকে মনে রাখে না। আমি না থাকলে আমাকেও স্মরণ করবে না। সামসুজ্জোহা ও চুনকা’র উত্তরাধিকার রয়েছে তাই তাদের স্মরণ করা হয়। নাজমা রহমান, আনসার আলীর উত্তরসুরীরা রাজনীতিতে নেই, তাই তাদের স্মরণ করেনি। তবে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে স্মরণ করি। ১৫ আগষ্ট ও ঈদের একটি ঝামেলার কারনে কোন কিছু করা হয়নি বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় নাজমা রহমানের জন্ম। তার ডাক নাম শিরিন। চার ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিলেন নাজমা রহমান। ১৯৬৮ সালে শহরের মর্গ্যান উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭২ সালে একই কলেজ থেকে বিএ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সাংবাদিক মুজিবুর রহমান বাদলের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন তিনি। বাদল দৈনিক সংবাদের চিফ রিপোর্টার ছিলেন। তার সম্পাদনায় আশির দশকের শেষদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সকাল বার্তা’ বের হয়। নাজমা রহমানও স্বামীর অনুপ্রেরণায় সাংবাদিতায় যুক্ত হন। সত্তর দশকে ‘সাপ্তাহিক পূর্বাণী’ পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকা শুরু করেন। পরে সকাল বার্তায়ও সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন।