নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ ও সংশোধনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগে আওয়ামী লীগ পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবার সকালের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
ঈদের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে সব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তাতে সরকারের ক্ষমতায় থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় আওয়ামী লীগে যে উন্মত্ততার ঝড় বইছে তা যেন থামছেই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা বিচার বিভাগকে ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বেআইনিভাবে আওয়ামী নেতারা বৈঠক করে চাপ প্রয়োগ করেন। যখন তারা ব্যর্থ হয়েছেন এখন রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ ও সংশোধনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পাঁয়তারা করছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিয়ে শুধু এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রাধীন করা।’
রিজভী আহমেদ দাবি করেন, ‘এই বিধানটি পৃথিবীর কোনো দেশে এখন পর্যন্ত প্রয়োগ হয়েছে এমন নজির নেই। এই অপচেষ্টা বিচার বিভাগকে করায়ত্ব করার সরকারের আরেকটি নীলনকশা। ৯৭ অনুচ্ছেদ অপপ্রয়োগ এবং সংসদে বিল উপস্থাপন করে এ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কোনো অপচেষ্টা সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রের শত্রু উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কেউ কেউ বলছেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতি সন্তোষজনক মনে করলে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে খেয়ালখুশি মতো ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। এরকম ব্যাখ্যা দিলে তো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকে না।
আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চায় না, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রিজভী বলেন, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চায় না, আমরাও তো প্রতিহিংসার রাজনীতি চাই না। কিন্তু খোদ সাধারণ সম্পাদক তাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা আছেন যারা নির্লজ্জভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করেন। এটা বন্ধ হলেই তো প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়।
রিজভী আহমেদ বলেন, দেশের ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি করা জুড়ি নেই। গত দুই দিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন যখনই অশিক্ষিতরা ক্ষমতায় আসে তখন দেশ পিছিয়ে পড়ে। দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন বাংলাদেশে যত উন্নয়ন হয়েছে সব তাদের আমলে। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, শিক্ষার মাপকাঠি যদি পয়সা দিয়ে কেনা পচা গমের বস্তায় ভরা ডক্টরেট ডিগ্রির ঘাড়ে নিয়ে দেশ চালালে দেশের কী বারোটা বাজে বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা তার প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত।
আওয়ামী লীগের সময় দেশের উন্নয়ন হয়- ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, চালের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ন্যূনতম ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, তা হলো আপনাদের উন্নয়নের নমুনা। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল বেআইনিভাবে যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, নিত্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে এটা হলো আপনাদের উন্নয়নের নমুনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আপনারা বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। জনগণের সঙ্গে এই প্রতারণা ঢাকবার জন্যই সন্ত্রাসের অন্ধগলিতে উন্নয়নের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্যই আপনারা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক তা চান না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পান।