অনলাইন ডেস্ক:
সোমবার, ২০ মে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ। এই ধাপে গোটা দেশজুড়ে ৮ টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৪৯ টি সংসদীয় আসনে ভোট নেয়া হবে। এই কেন্দ্রগুলি হল উত্তর প্রদেশ (১৪), মহারাষ্ট্র (১৩), পশ্চিমবঙ্গ (৭), বিহার (৫), ওড়িশা (৫), ঝাড়খন্ড (৩), লাদাখ (১) ও জম্মু-কাশ্মীর (১)।
ভোট শুরু হবে সকাল সাতটায়, চলবে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত। এদফায় দেশজুড়ে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৯৫ লাখ, এর মধ্যে ৪.৬৯ কোটি পুরুষ ভোটার, ৪.৬২ কোটি নারী ভোটার, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৫৪০৯ জন। ভাগ্য নির্ধারণ হবে মোট ৬৯৫ জন প্রার্থীর।
পঞ্চম দফায় সোমবার ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে দেশটির সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর। এই দফায় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি আসন থেকে লড়তে চলেছেন এই কংগ্রেস নেতা।
মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া রায়বেরেলি কেন্দ্রটি কংগ্রেসের বিশেষ করে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০০৪, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পরপর তিনবার ওই আসনটিতে জিতেছিলেন সোনিয়া। এমনকি শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে দেশজুড়ে কংগ্রেসের অত্যন্ত খারাপ ফলের মধ্যেও রায়বেরেলি আসনটি নিজের দখলে ধরে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। এই কেন্দ্র থেকেই প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও আগে ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধীও ১৯৫২ সালে এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন সোনিয়া গান্ধী। ফলে সেই কেন্দ্রে রাহুলকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। এই কেন্দ্রে রাহুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দীনেশ প্রতাপ সিং।
চলমান লোকসভা নির্বাচনে রায়বেরিলির পাশাপাশি কেরালার ওয়েনাড আসন থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন রাহুল। গত ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ওয়েনাড কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়।
ভাগ্য নির্ধারণ হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উত্তরপ্রদেশের আমেঠি কেন্দ্র থেকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আমেঠি কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন ইরানি। তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। কিন্তু স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে হেরে যান রাহুল। আমেঠি কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মা।
উত্তরপ্রদেশের লখনউ আসন থেকে লড়ছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টির রবিদাস মেরহোত্রা, বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী সারোয়ার মালিক। ২০১৯ সালের নির্বাচনের এই কেন্দ্র থেকে সমাজবাদী পার্টির পুনম শত্রুঘ্নকে ৬.৩০ লাখ ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হয়ে আসছে। একটা সময় এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ হয়েছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।
পদ্মশ্রী প্রাপক সিনিয়র আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমকেও নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যাবে। মুম্বাই নর্থ-সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর (২৬/১১) মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার হামলা, ১৯৯৩ সালে মুম্বাইতে সিরিয়াল বোমা হামলা, ১৯৯৭ সালে বলিউড প্রডিউসার এবং টি সিরিজ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা গুলশান কুমার হত্যাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের বর্ষা গায়কোয়াড়।
এছাড়াও পঞ্চম দফায় দেশটির একাধিক মন্ত্রী, সেলিব্রেটি প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে। এদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী পীযূষ গয়াল (মুম্বাই নর্থ), কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর (বনগাঁ), জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা (বারামুল্লা), এলজেপি প্রার্থী চিরাগ পাসওয়ান (হাজিপুর), সাবেক মন্ত্রী বিজেপি নেতা রাজিব প্রতাপ রুডি (সরণ), লালু প্রসাদ যাদবের কন্যা আরজেডি প্রার্থী রোহিনী আচার্য (সরণ), মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পুত্র শ্রীকান্ত শিন্ডে (কল্যাণ) প্রমুখ।
পশ্চিমবঙ্গে যে সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে সেগুলি হল বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেরিয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি, আরামবাগ। এরমধ্যে বিজেপির দখলে রয়েছে তিনটি আসন, তৃণমূলের দখরের হয়েছে বাকি চারটি আসন।
এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১,২৫,২৩,৭০২ জন, পুরুষ ভোটার ৬৩,৫১,৩২৯ জন, নারী ভোটার ৬১,৭২,০৩৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩৪৮ জন। ৭ টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৩,৪৮১ টি। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে ৬০ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ২৯,১৭২ জন সদস্যকে মোতায়েন রাখা হবে।
রাজ্যের সাতটি কেন্দ্র: বনগাঁ কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, তার প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাস, কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে গিতবারের বিজয়ী সংসদ সদস্য বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং, তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সিপিআইএম প্রার্থী অভিনেতা দেবদূত ঘোষ।
হাওড়া কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদ তৃণমূলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী, সিপিআইএম প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জি।
উলুবেরিয়া কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ, বিজেপির প্রার্থী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী, কংগ্রেস প্রার্থী আজাহার মল্লিক।
শ্রীরামপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী কল্যাণ ব্যানার্জি, বিজেপির প্রার্থী কবীর শংকর বোস, সিপিআইএম প্রার্থী দীপশিতা ধর।
হুগলি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের প্রার্থী রচনা ব্যানার্জি, সিপিআইএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ।
আরামবাগ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ’কে লড়তে হবে বিজেপি প্রার্থী অরূপ কান্তি দিগর ও সিপিআইএম প্রার্থী বিপ্লব কুমার মৈত্র’র বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, মোট সাত দফায় দেশটির ৫৪৩ টি লোকসভা আসনে ভোট নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম চার দফার ভোটের মধ্যে ৩৭৯ আসনে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
ভোটের পরবর্তী ধাপে ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা আগামী ৪ জুন। চলমান লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেধেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তবে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র আসন জয়ের এরকম কোন লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করা।