আজ শুক্রবার, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভাই ভাই মিল্লা খাস জমি খামু গিল্লা!

 প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে : আনোয়ার হোসেন
 জমি বাচাঁন নয় পদত্যাগ করেন : এবি সিদ্দিক
অপরাধ প্রতিবেদক
জায়গা দখলের মহা উৎসবে মেতেছে ক্ষমতাসীনরা। দলের পথ থাকলেই সরকারি জায়গা দখল করে নেয় নেতা পরিচয়ধারী ভূমিদস্যুরা। সরকারি দখলকৃত জায়গা ভাড়া দিয়ে মাসে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় কিন্তু সরকার রাজস্ব পায়না। ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবী ধারী ভূমিদশ্যুদের সাথে সরকারি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও কি জড়িত? প্রশ্ন নগরবাসীর।

নারায়ণগঞ্জের জেলা পরিষদের সরকারি জমি দখলে উৎসবে মেতে উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী ও পদ-পদবি ধারী নেতারা। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সূত্র মতে ’ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের নারায়ণগঞ্জের শহরের চাষাড়া ডাক বাংলার সামনে থেকে ঢাকার পোস্তকলা পর্যন্ত সড়কের দু’ পাশের অংশের জায়গা তাদের নিজস্ব সম্পতি। এ সকল সম্পতি কিছু অংশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে লিজ মারফত বরাদ্ধ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে বেশির ভাগ জমি দখল করে রেখেছে ক্ষমতাশীন দলের নেতারা। এছাড়া ১ বছরের লিজ নিয়ে আর নবায়ন না করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ক্ষমতার বলে দখল করে রেখেছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পরিচয় গোপন সূত্রে জানায়, জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে রেখেছে বড় পদধারী নেতারা। জমি ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিন্তু সরকারের ভাগ্যে শূণ্য।

গতকাল সরজমিনে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরানো সড়কের তোলারাম কলেজের মোড় ডাক বাংলার সামনে থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত সড়কের দক্ষিন ও উক্তর পাশের জেলা পরিষদের সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রেস্তোরা, চায়ের দোকান, গেরেজ, মটরস পারসের দোকান, বিভিন্ন খাবারের পন্যের দোকান, ফার্নিচারের দোকান, বাজারসহ একাধিক ভবন। এ সকল দোকান থেকে প্রতি মাসে বড় অংকের ভাড়া আদায় করে থাকে সরকারি জেলা পরিষদের জমি দখলকারীরা।

তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন নির্বাচনের পর বলেছিলেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের প্রশস্ত করা হলে চাষাড়া থেকে জেলা পরিষদের যে জমি লিজ দেওয়া হয়েছে জনস্বার্থে আমরা সেগুলো বাতিল এবং জমি দখলমুক্ত করে রাস্তা প্রশস্ত করতে জায়গা দিয়ে দিবো।

সরকারি জমিতে গড়ে উঠা ভাড়া দোকানী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে দোকান করছি দোকান নিয়েছি অগ্রিম টাকা দিয়ে এবং প্রতিমাসে ভাড়া ৬ হাজার টাকা প্রদান করি। জায়গার লিজ আসে কিনা জানি না ভাড়া দিয়ে দোকান করি তবে কাকে ভাড়া দেই বলতে পারবো না ক্ষমা করবেন।

অপর একজন রোস্তোরার মালিক বলেন, এখানে যে সকল সরকারি জমি রয়েছে এই জায়গায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মালিকানা প্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠান গুলো যারা জমি ভোগকারী বা দখলকারী তাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের সরকারি কর্মচারি জানায়, জেলা পরিষদ থেকে ১ বছরের জন্য লিজ প্রদান করা হয়ে থাকে কিন্তু এই লিজকারীরা আর নবায়ন না করে কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে বছরের পর বছর জমি দখল করে রেখেছে। জেলা পরিষদের নিজস্ব সরকারি জমি বড় ভাইদের নাম ব্যবহার করে ও দলের নাম ভাঙিয়ে এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ভাই বানিয়ে যোগসাজশ করে গিলে খাচ্ছে বিভিন্ন নেতারা।

গত বছর জেলা পরিষদের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠে। অভিযোগকারী যুবলীগ নেতা শাহ ফয়েজ উল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ১৯ শতাংশ জমি লিজ নিয়েছিলাম ১ বছরের জন্য কিন্তু নবায়নর স্টে আর্ডার থাকায় সেভাবেই আছে। এছাড়া অন্য যারা জমি দখল করেছে তাদের বিষয়ে আমি বলতে পারবো না।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, দল করলেই বা দলের পদ থাকলেই সরকারি জায়গা জমি দখল করে নেয়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের জেলা পরিষদের জমি দখলের হাট বসিয়েছে নেতা নামের ভূমিদশ্যুরা। আর এ সকল জায়গা জমি রক্ষা করার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকে তারা সব দেখে কিন্তু দলের লোক নেতা কর্মী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। জেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকা প্রধান যদি এ সকল ভূমিদশ্যুদের কাছ থেকে সরকারি জমি বাচাঁতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করেন। কারন সরকার জেলা পরিষদের জমি রক্ষনা বেক্ষন করার দায়িত্ব আপনাকে দিয়েছে এবং সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ আপনি না পারলে অন্যকে করার সুযোগ দিন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, আমরা সময় জেলা পরিষদের জায়গা শতভাগ দখল মুক্ত করতে পারি নাই তবে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান করেছি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য। এছাড়া আমরাও অনেককে লিজ দিয়েছি আবার পূর্বের অনেকের জায়গা নবায়ন করেছি। বর্তমান দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি বর্তমান পরিস্থিতি জানেন।

তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, নারায়ণগঞ্জের পুরানো সড়কের চাষাড়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত জেলা পরিষদের সরকারি জমি। আমি দায়িত্বে আসার আগে অনেক জমি লিজ হয়েছে। যে গুলো দেখেছি সে গুলো কিছু কিছু আমরা লিজ করেছি। তবে জেলা পরিষদের জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে সবই বৈধ না লিজের বাহিরে অবৈধ অনেক। এগুলোকে আমরা নোটিশ দিয়ে কিছু কাগজ পত্র পেয়েছি কিন্ত এ সকল কাজল পত্রের সাথে আমারদের হিসাবের অনকে গরমিল রয়েছে। জেলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ কেউ কেউ জেলা পরিষদের কাগজ ব্যবহার করে লিজ দিয়েছে কিন্তু জেলা পরিষদের হিসাব একাউন্টে টাকা আসে নাই এগুলো আমরা তদন্ত করে পেয়েছি। আমরা মিটিংয়ে সিদান্ত নিয়েছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।