সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রতিদিনের মত ঘুম থেকে উঠে সকালে হঠাৎ করেই বাবার সাথে স্কুলে যাওয়ার বায়না করেছিল মিজমিজি পশ্চিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী ইসরাত জাহান ইরা (৬)।
তখন মায়ের মুখে মেয়েকে বুঝানোর শান্তনা, ‘আজকে আমার সাথে চলো, বাবা আরেক দিন নিয়ে যাবে’। কিন্তু মেয়ে যে তা মানতে নারাজ। আজ তাঁর বাবার সাথেই স্কুলে যাবে।
পরবর্তীতে কোন উপায়ান্তর না দেখে আদরের একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে মা ছুটে আসলো নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে। কিন্তু বিধি বাম!
বাবা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে এদিন বাসায় নেয়ার বড্ড ব্যাকুলতা শিশু কন্যা ইরার চোখেমুখে ফুঁটে উঠলেও শেষতক আদালতের নির্দেশে তাঁর বাবাকে যেতে হয়েছে কারাগারে।
সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সোনারগাঁ থানার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ রিমান্ড আবেদনের ফলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মেহিদী হাসানের আদালত শুনানী শেষে কাউন্সিলর ইকবালের রিমান্ড বাতিলের পাশাপাশি জামিনও নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এরপর হাতকঁড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় শিশু ইরা ক্ষনিকের জন্য তাঁর বাবার কোলে উঠে চুমু খায়। আর জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা তুমি বাসায় কবে আসবে?’ তখন অবুঝ মেয়ের আবেগঘন প্রশ্নে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কাউন্সিলর ইকবাল। মেয়েকে শান্তনা দিয়ে বলেন, ‘আসবো মা, তোমাকে আর কয়েকদিন পর থেকে স্কুলে নিয়ে যাবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্সিলর ইকবালের পরিবারের একজন সদস্য জানান, ‘ইরা প্রতিদিনই বাবার সাথে স্কুলে যাওয়ার বায়না করে। পরক্ষণে তার মা তাঁকে বুঝিয়ে শান্তনা দেন। কিন্তু সোমবার আর মেয়েকে কোনক্রমেই শান্তনা দিয়ে রাখতে পারেননি মা। ফলে বাধ্য হয়েই বাবাকে দেখাতে তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।’
উল্লেখ্য, একটি প্রতারনা মামলায় গত ২০ মার্চ আদালতে আত্মসর্মপণের পর ২৫ মার্চ জামিন পান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। কিন্তু কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তাকে রূপগঞ্জ থানার একটি নাশকতার মামলায় শ্যোন এরেষ্ট দেখানো হয়। পরবর্তীতে ঐ মামলায় জামিন পাওয়ার পর আবার ফতুল্লা ও সদর মডেল থানার নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়।
তারপর ফতুল্লা ও সদর থানার মামলায় জামিন গত ২৬ এপ্রিল জামিন হলেও ফের ২৭ এপ্রিল সোনারগাঁ থানার আরেকটি নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড প্রার্থণা করা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ আদালত ৩০ এপ্রিল রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে ইকবালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এব্যাপারে কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের আইনজীবী মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, ‘পুলিশ একের পর এক রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাবন্দি করে রাখছে। আদালত একদিকে তাঁর জামিন মঞ্জুর করলেও আরেকদিকে পুলিশ নাশকতার মামলায় তাকে শ্যোন এরেষ্ট দেখাচ্ছে।’