আজ রবিবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাঠে কবরী, পলাশ বেকায়দায় শামীম ওসমান!

বেকায়দায় শামীম ওসমান

বেকায়দায় শামীম ওসমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ একেএম শামীম ওসমান নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত। দেশ জুড়ে তিনি সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত নানা বির্তকিত কর্মকান্ড নিয়ে। নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ সর্বত্রই তার ইমেজ নেতিবাচক এমনটাই মনে করেন তার নিজ দলের নেতাকর্মীরা।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন বিরোধিদলীয় নেত্রীর লং মার্চ আটকে দিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন শামীম ওসমান। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি প্রতিনিয়তই নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়ে চলেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে চলছেন। এরই মধ্যে তিনি একটি সভায় বলেছেন, ১০/১২টি মনোনায়ন নাকি তার পকেটে আছে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জে বসে চট্টগ্রামের মনোনয়ন চেঞ্জ করার ক্ষমতাও তার আছে বলে তিনি বলেছেন। আর তার এরকম কথাবার্তাই তার নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

তার এসকল বক্তব্য বর্তমানে তার নিজ দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই অনেকে বিশ^াস করছেন না। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই বলছেন শামীম ওসমান আসলে মিথ্যা বলছেন বা চাপাবাজী করছেন। আর এর কারণ হিসেবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমানে শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রমিক নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ ও এই আসনের সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী।

২০১৪ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমান এই আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে এই নির্বাচনি আসনে এমপি ছিলেন সারাহ বেগম কবরী। যিনি বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এছাড়াও আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন শ্রমিক নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ। আওয়ামীলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এরই মধ্যে কাউছার আহমেদ পলাশকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশও প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। যার কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে বেশ কিছুদিন আগে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাউছার আহমেদ পলাশের বাসায় গিয়ে তার সাথে চা চক্রে মিলিত হওয়ার পর। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার এরই মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সারাহ বেগম কবরী বেশ সক্রীয় হয়ে উঠেছেন। সাবেক এই এমপি এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামীলীগর মনোনয়ন চাইবেন তা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বক্তব্যের পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই বলছেন, শামীম ওসমান যদি এতো কিছুই পারেন তাহলে তিনি কেন এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার গুরু আলহাজ আনোয়ার হোসেনকে এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র বাবু চন্দনশীলকে মনোনয়ন এনে দিতে পারলেন না। এছাড়াও এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নিজের মনোনয়নই নিশ্চিত করতে পারেনি। এরপর ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে অনেক তর্জন গর্জন দিয়ে তিনি মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন এবং দলীয় সর্মথনও তিনি বাগিয়ে এনেছিলেন। অথচ তিনি সেই নির্বচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে।

প্রসঙ্গত, বিগত প্রায় বেশ কয়েকমাস ধরেই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আলোচিত ও সমালোচিত এমপি শামীম ওসমান কি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাবেন কি পাবেন না এটা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে। কারন গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের কোন অনুরোধই রাখেননি দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও শামীম ওসমানের প্রতি নানা কারনে প্রধানমন্ত্রী নাখোঁশ এমন কিছু রিপোর্টও জাতীয় ও স্থানীয় গনমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমান আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না এমন কথা প্রচার হতে থাকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজের পক্ষের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার জন্যই শামীম ওসমান এসব কথা বলছেন। তিনিও টের পেয়েছেন যে আগামী নির্বাচনে তার মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই তিনি আগে থেকেই তার পক্ষের লোকজনকে নির্বাচনের মাঠে নামাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি অনেক সভায় বক্তব্যে বলেছেন আগামী নির্বাচন নাও করতে পারেন। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শামীম ওসমানের এরকম বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে তিনি তার রাজনৈতিক ভবিষত নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তাই মুখে শামীম ওসমান যাই বলেন না কেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে তিনি টিকে থাকবেন কিনা সেই সংশয় এখন তার অনুসারীদের মাঝেও বিরাজ করছে।

আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ফতুল্লায় শ্রমিক নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ ব্যাপক জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ নেই ফতুল্লায়। এছাড়া সাবেক এমপি কবরীও এই আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় প্রধান কাকে এখানে মনোনয়ন দিবেন এটা সময় হলেই জানা যাবে। তবে এবার যে শামীম ওসমান সহজেই মনোনয়ন পাচ্ছেন না তা প্রতীয়মান। আসন্ন নির্বাচনে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিতই এখন শামীম ওসমানের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ