অনলাইন ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পিপলস পার্টির পার্লামেন্টারিয়ানস প্রধান আসিফ আলী জারদারি ছয়টি বুলেটপ্রুফ বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। দুবাইয়ে হাজার হাজার একর জমির মালিক জারদারির শখ অস্ত্র, ঘোড়া ও পশু কেনা। এ জন্য লাখ লাখ রুপি খরচ করেন তিনি।
আগামী ২৫ জুলাই দেশটির জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন হবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৩০ জুন। সম্প্রতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রে সম্পত্তির যে বিবরণ আসিফ আলী জারদারি দিয়েছেন, এতে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেসিডেন্ট পারমিট (ইকামা) আছে তাঁর। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর পাঁচটি সম্পত্তির মালিক হওয়া ছাড়াও ডজনেরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে জারদারির। দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে আসিফ আলী জারদারি ও তাঁর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সম্পদের তথ্য জানানো হয়।
বিরোধী দল ও মিডিয়ার দাবি, জারদারির সম্পত্তির পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। তাঁদের দাবি, ফ্রান্স ও দুবাইতে বিলাসবহুল প্রাসাদ আছে জারদারির। যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশেই নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে তাঁর।
তবে আসিফ আলী জারদারি বরাবরই বলে আসছেন, পাকিস্তানের বাইরে দুবাইতে তাঁর একটি খালি জমি রয়েছে। কোনো এক সময় যা ১০ কোটি রুপি দিয়ে কিনেছিলেন তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ রুপি। যার অর্ধেকেরই মালিক তাঁর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।
আসিফ আলী জারদারির গাড়ির মধ্যে রয়েছে তিনটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, দুটি বিএমডব্লিউ ও একটি টয়োটা লেক্সাস। সব কটিই বুলেটপ্রুফ। সংগ্রহে থাকা শখের ঘোড়া ও গবাদিপশুর বাজারমূল্য প্রায় ৯৯ লাখ রুপি। এ ছাড়া প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ রুপির অস্ত্র আছে জারদারির।
আসিফ আলী জারদারি মনোনয়নপত্র আবেদনে সম্পত্তির হিসাবে দেখিয়েছেন, ১ কোটি ২৯ লাখ রুপির আবাসন ব্যবসা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া আসিফ অ্যাপার্টমেন্টে ৮ লাখ ৯০ হাজার রুপি বিনিয়োগ করেছেন তিনি। তিনি দেখিয়েছেন, পাকিস্তানের বাইরে তাঁর কোনো ব্যবসায়িক বিনিয়োগ নেই। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট জারদারি গ্রুপ (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং পার্ক লেন এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডে ১০ লাখ রুপি বিনিয়োগ করেছেন। জারদারি গ্রুপের জন্য ৪৫ লাখ রুপি ঋণ নিয়েছেন তিনি। তাঁর নগদের পরিমাণ ২০ কোটি ৯০ লাখ রুপি। এ ছাড়া ৮ কোটি ৯৭ লাখ রুপি আমানত আছে সিল্ক ব্যাংকে। সিন্ধু ব্যাংকের লারকানা শাখায় এক হাজার রুপি আমানত রয়েছে তাঁর, এটিও উল্লেখ করেন তিনি। অর্থাৎ কতটা স্বচ্ছভাবে সম্পত্তির বিবরণ দিয়েছেন, সেটি বোঝাতে চেয়েছেন জারদারি।
করাচির ক্লিফটন এলাকায় জারদারির দুটি সম্পত্তি রয়েছে, যার মূল্য ১১ কোটি ১৫ লাখ রুপি। এ ছাড়া করাচিতে ডিফেন্স হাউজিং প্লটে দুই হাজার বর্গফুটের একটি প্লট আছে, যা সাড়ে আট লাখ রুপিতে কিনেছিলেন তিনি। নওয়াবশাহতে তাঁর একটি বাড়ি হয়েছে, যার দাম ২ কোটি ২৫ লাখ রুপি। এ ছাড়া নওয়াবশাহ, লারকানা ও টান্ডোতে ৭ হাজার ৪০০ একর কৃষিজমি রয়েছে তাঁর।
পিপিপির চেয়ারম্যান জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও প্রায় বাবার মতো ধনী। এই শতকোটিপতির পাকিস্তান ও পাকিস্তানের বাইরে প্রায় দুই ডজন সম্পত্তি রয়েছে। দুবাই ও যুক্তরাজ্যে ব্যাংক আমানতের অর্থও নেহাত কম নয়।
তরুণ জারদারি নগদ পাঁচ কোটি রুপির মালিক। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তাঁর ১ কোটি ৩৮ লাখ রুপি আছে। নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেসিডেন্ট পারমিট রয়েছে বিলাওয়ালের। ক্লিফটন ও করাচিতে ৩০ লাখ রুপি মূল্যের বাড়ি আছে তাঁর।
দুবাইতে উপহার ও উত্তরাধিকার সূত্রে দুটি ভিলা পেয়েছেন বিলাওয়াল। মা বেনজির ভুট্টোর ১২ লাখ রুপির সরকারি বন্ডের মালিকও তিনি। এ ছাড়া জারদারি গ্রুপ ও পার্ক লেন এস্টেটে তাঁর ১১ লাখ রুপির শেয়ার রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়। ওই সময় পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন পারভেজ মোশাররফ।
দুবাইতে ২২টি ও যুক্তরাজ্যে ১টি বিনিয়োগ ছিল বেনজির ভুট্টোর। তাঁর মৃত্যুর পর এগুলোর মালিকানা এখন বিলওয়ালের। পাকিস্তানের ভেতরে অস্ত্র ও অন্যান্য গৃহস্থালি জিনিস মিলিয়ে বিলওয়ালের আছে আরও ৬০ লাখ রুপির সম্পত্তি।
২০১৭ সালে নির্বাচনের মনোনয়ন আবেদন থেকে জানা যায়, ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর ২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫২ রুপি আয়কর দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাকি সম্পত্তির বিপরীতে সাড়ে ৩৯ লাখ রুপি কর দিয়েছেন বিলওয়াল।