নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে জেলার আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার উপর ও ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নওগাঁর ছোট যমুনা নদী অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে বন্যার পানি। শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আউটলেট দিয়ে প্রবেশ করে শহর প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক, জেলা দায়রা জজের বাসভবনসহ বাঙ্গাবাড়িয়া, বিহারী কলোনি, উকিলপাড়া, কালীতলা, সুপারীপট্টি মহল্লা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও প্রধান সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শহরবাসী চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
শহরের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শহরের পরিস্থতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শহরবাসী।
উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির ফলে নদীটি রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হচ্ছে। সেই সাথে পতœীতলা, বদলগাছী, ধামইরহাট, রানীনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে আত্রাই উপজেলা ও নাটোর জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বাঁধ ভেঙেছে মান্দা উপজেলায়।
বন্যার পানিতে নওগাঁর ৬টি উপজেলার লক্ষাধিক বিঘার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে করে আতঙ্কে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার লাখো মানুষ।
গত দুই দিনে নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের ঘোষগ্রাম হতে নান্দাইবাড়ি পর্যন্ত তিন জায়গায় পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢোকে দ্রুত গতিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলায় এ পর্যন্ত গোনা, কাশিমপুর, মিরাট ও রাণীনগর সদর ইউনিয়নের প্রায় ৩২ গ্রামের বসবাসরত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় আত্রাই উপজেলার সাথে নওগাঁ জেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, রানীনগর উপজেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দের কথা জানালেও গত দুই দিন ধরে ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও পরিবারের তথ্য সংগ্রহে কাজ চলছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, মোট ৫ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৩৩ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ টাকা বন্যা কবলিত এলাকার জন্য পাঠানো হয়েছে।