নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি মাসের ৩১ তারিখ চতুর্থ ধাপে নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রুপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা বহাল তবিয়তে অর্থ্যাৎ মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন যে যার অবস্থানে।
তবে আড়াইহাজার ও রুপগঞ্জ থেকে দু’জন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিন উপজেলার বাকি সব বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের অবস্থানেই আছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ বিদ্রোহীরা। যার ফলে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এমনটাই মনে করছেন তিন উপজেলার সাধারণ মানুষ।
গতকাল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে রুপগঞ্জ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমান তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অর্থ্যাৎ রুপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহাজাহান ভুইয়ার বিপক্ষে স্বতন্ত্র থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন তাবিবুল কাদির তমাল ও এস আলম। তবে লড়াই হবে শাহাজাহান ভুইয়া ও তমালের সাথে। জানা যায়, রুপগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষের ফোকাস এই দুই প্রার্থীর ওপর। কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী তমাল এককভাবে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রথম থেকেই তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে রুপগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করে মাঠ নিজের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করছেন। রুপগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পাচ্ছেন তমাল। যার ফলে আত্ন বিশ্বাসের তুঙ্গে অবস্থান করছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী এই প্রার্থী। অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নৌকার শাহাজাহান ভুইয়া প্রস্তুত থাকলেও বিদ্রোহী তমালের দৌড়ের সাথে কোনভাবেই পেরে উঠছেন না তিনি। সেই সূত্রে তমালের তবিয়তে অনেকটাই বেকয়াদায় শাহাজাহান।
এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকারকে সমর্থন করে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজালাল মিয়া তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মনোনয়ন বাতিল ও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন দুই জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র থেকে বহাল আছেন উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন মোল্লা।
আত্ন বিশ্বাসর সাথে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এমনকি আড়াইহাজারের ৯৫ শতাংশ ভোট তিনিই পাবেন এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি। ইকবাল হোসেনের আত্ন বিশ্বাস এতটাই বেশী যে তিনি প্রতিপক্ষকে কিছু মনেই করছেন না। তার মতে, আড়াইহাজারের মানুষ তাকেই ভালোবাসে এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এই উপজেলার ৯৫ শতাংশ মানুষ তাকেই সমর্থন করবে। যার ফলে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পরেও বেকায়দায় মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার।
অন্যদিকে, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোশারফ হোসেনকে কোনভাবেই ছাড় দিতে নারাজ বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। ইতিমধ্যে এই উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। গত সোমবার সোনারগাঁ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।
আরও দুই সপ্তাহ আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন এই দুই প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেনের চেয়ে প্রচারণা ও ভোটার আকৃষ্ট করায় এগিয়ে আছেন বিদ্রোহী কালাম। সবমিলিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠ সবচেয়ে বেশী গরম হয়ে আছে বলে জানা যায় সোনারগাঁ এলাকার মানুষের কাছ থেকে। প্রতীক বরাদ্দের অনেক আগে থেকেই নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তার আগের থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। সবমিলিয়ে নৌকার প্রতীক নিশ্চিত হওয়ার পরও বিদ্রোহী কালামের কাছ থেকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় না পাওয়ায় অনেকটা পিছপা হয়ে গেছেন মোশারফ হোসেন।
আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আজ। নারায়নগঞ্জ জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রতীক দেয়া হবে। গতকাল (১৩ মার্চ) ছিলো প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন। যদিও প্রতীক বরাদ্দের অনেক আগে থেকেই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।