জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন শ্রমজীবী মানুষ। তিনি নিজেকে শ্রমিক পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতেন’ উল্লেখ করে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালিন সময়ে শ্রমিকদের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি বাংলাদেশে উপহার দিয়েছেন।’
বুধবার (১ জুন) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই কথা বলেন তিনি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সভাপতি আকবর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিতি কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নুরুল ইসলাম খান নাসিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি মেহেদী আলী খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিয়া মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুর ইসলাম মঞ্জু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল ও সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
‘রাজনীতি করা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার’ উল্লেখ করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘এই সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নসাৎ করে দিয়েছে। বিরোধী দলকে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ না দিয়ে নির্যাতন, জুলুম, অত্যাচার, হামলা-মামলা, খুন-গুমের মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সরকার মানুষের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতেও দিচ্ছে না। বর্তমানে কোনো গণমাধ্যমেরও স্বাধীনতা নেই। এই সরকারের জুলুম নির্যাতন সকল সীমা অতিক্রম করেছে। বাংলার মানুষ আর এই সরকারকে চায় না। সেটি তারাও জানে। জানে বলেই তারা বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষ দমনে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।’
‘দীর্ঘদিন ধরে এই সরকার বিরোধী দলকে সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে দিচ্ছে না’ বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলকে তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে প্রশাসন দিয়ে দমন-নীপিড়ন করে যাচ্ছে। পুলিশের জুলুম আর মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। এই হচ্ছে তাদের রাজনীতির মূল উপাদান। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদের ভয় দেখাতে দেখাতে আজ নিজেরাও ভয়ে ভীত।’
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায় বলেই কথায় কথায় তার বিষোদগার করে। তারেক রহমান তাদের কাছে আজ ভীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ এই দেশের মানুষ এখন সব চাইতে বেশি বিশ্বাস করেন তারেক রহমানকে। তারা অপেক্ষা করছেন প্রিয় নেতার প্রত্যাবর্তনে। কিন্তু বর্তমান সরকার এতটাই ভীত যে তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে, ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাকে আটকে রাখতে চাইছে। কিন্তু এতেও সরকার তারেক রহমানকে আটকাতে পারেনি। বিদেশে বসেও তিনি দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, জাতিকে দিকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।’
‘অনেক ওয়াদা করে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত দুটি নির্বাচনে বিরোধী দলকে নির্বাচনে নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, এই সরকারকে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নাই। এই সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরাও কোটি কোটি মানুষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুত্থানের লক্ষ্যে। আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান যেদিন নির্দেশনা দিবেন, সেদিনই সরকারের পতন ঘণ্টা বাজিয়ে ঘরে ফিরবো।’
গিয়াসউদ্দিন বলেন,‘নির্বাচন যদি হতে হয়, তা হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে। নির্বাচন পূর্বে একটি সরকার গঠন করতে হবে। যাদের শুধু কাজই হবে, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। কিন্তু এই সরকার নিরপেক্ষ সরকার অধিনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কারণ তারা জানে, তাদের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। এই দেশের মানুষ আর তাদের চায় না। বিশ্বাস করে না। ফলে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই তারা আবারও একটি প্রহসনের নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে।’
সরকার পতন আন্দোলনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই স্বৈরশাসক বিদায় নিবে সেদিন আর বেশি দূরে না। গণতন্ত্র পুনরুত্থানের মাধ্যমে এই দেশে বিএনপি সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আসুন তারেক রহমানের আহ্বানে সারা দিয়ে, নিজেদের বিভেদ ভুলে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করি। এখন বিভেদ করার সময় নয়। এখন দলের মধ্যে, নিজেদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন। তবে, আমাদের ঐক্যে এই সরকারের অনেক ভয়। তাই আমরা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি সে জন্য তারা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
আলোচনা শেষে দুঃস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের আহবায়ক এস. এম আসলাম, সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্য ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. এ হালিম জুয়েল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম প্রমুখ।