বসন্ত এল। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে ঋতুরাজ সোনালি রোদে ভরে দিচ্ছে আকাশ। প্রাণের উষ্ণতা সঞ্চার করছে শীতে মৃতপ্রায় প্রকৃতিতে। শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখা ভরে উঠেছে রক্তিম ফুলের সম্ভারে। মাঝে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় দুলে উঠছে সেই কুসুমশোভিত শাখা। ঝরে যাচ্ছে পুরোনো জীর্ণ মলিন পাতা। নতুন কিশলয়ের পসরা তরুলতায়। যেন নতুন হয়ে উঠেছে পুরোনো পৃথিবী। রবীন্দ্রনাথের গান দিয়েই বসন্তবরণের প্রসিদ্ধ রেওয়াজ— ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে,/ মধুর মলয়সমীরে মধুর মিলন রটাতে।।’
মন উচাটন করা কুহু কুহু গান গাইছে কোকিল। প্রকৃতিতে জেগে ওঠা এই বিপুল প্রাণের স্পন্দন, বুনো ফুলের গন্ধমাখা বহতা বাতাস মানুষের মনেও এক অনির্বচনীয় গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। ঘুচে যায় সকল দ্বিধা-সংকোচের বাধা। শীতে হতশ্রী প্রকৃতিকে লাবণ্য সুষমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যেমন ঋতুরাজ বলে বসন্তের খ্যাতি, তেমনি সে যৌবন ও প্রেমের ঋতু হিসেবেও সমাদৃত হয়েছে বাঙালির কাছে।
রাজধানীর কৃত্রিম পরিবেশে বসন্তে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগের সুবিধা বিশেষ নেই। তা সত্ত্বেও বসন্তবিমুখ নন ব্যস্ত নগরবাসী। পোশাক-আশাকে থাকে রঙের বাহার। সাজসজ্জায় ফুলের সংযোগ। অমর একুশের গ্রন্থমেলা থেকে শুরু করে উদ্যান, পার্কগুলোতে নবীনদের প্রাণখোলা আড্ডা, উচ্ছ্বাস। আর বরাবরই নানা আয়োজনে বসন্তবরণের ঘটা থাকে শহরজুড়ে। ব্যতিক্রম হবে না এবারও।
সারা দেশে বসন্তবরণের উৎসব হচ্ছে। সকাল সাতটা থেকে একযোগে এই উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে।