স্টাফ রিপোর্টার :
হেফাজতে ইসলামের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ‘নারায়ণগঞ্জর গডফাদারের অনুসারি’ বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেছেন, ফেরদাউস, আউয়াল নারায়ণগঞ্জের গড়ফাদারের অনুসারি। তারা বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে থাকে। বিভিন্ন অপকর্মে তার লাঠিয়াল বাহিনী, সহযোগি হিসেবে কাজ করে।
গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে হেফাজত নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের আচরণ আমরা বুঝি। মেয়র আইভী যখন বলেছে, ‘ডিআইটির দোকান অবৈধ দখল রাখতে দিবো না’ তখনই তাদের অর্থনীতিতে খাদ পড়েছে এবং তাদের মাথা গরম হয়ে গেছে। এই আউলাদের বিরুদ্ধে বহু হাজি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। এই হলো তাদের চরিত্র।
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। চরুকলা ইনস্টিটিউট তার নিজস্ব গতীতে, নিজস্ব ফর্মে চলে। সেটি তার মতোই চলবে। ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবেন, ফেরদাউস আপনার বুকে এত দম নাই। এর জন্য আপনাকে আবার জন্মাতে হবে। ফু দিয়ে সমস্ত কিছু উড়িয়ে দিবে এসস্ত কথা বলে লাভ নাই।
রফিউর রাব্বি বলেন, চারুকলার পাশে যখন মাদকের আখড়া ছিল তখন তারা কোনো শব্দ করেনি। কিন্তু মানুষের দাবিতে যখন সেখানে পার্ক, নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বস্থির একটি জায়গা হলো তখন এই তথাকথিত মাওলানাদের ঘুম হারাম হয়েগেল। পার্কে যারা যায় তাদের পতিতা বলে। অর্থাৎ তাদের নৈতিক চরিত্রের স্বচ্ছতা নেই।
তিনি বলেন, সারাদেশে অহরত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসাগুলোতে বলাৎকারের ঘটনা, যে মাওলানারা করছে তাদের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এসব ঘটনায় মাওলানা নামধারী ফেরদাউস, আউলাদদের কখনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। মাদ্রাসায় ধর্ষণের পর নুসরাতকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হলো সেই ঘটনার প্রতিবাদও তারা করেনি। কারণ তারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের সহকারীরা সারাদেশে এসব অপকর্ম করে বেড়ায়। এরা যারা ধর্ম রক্ষার কথা বলে এদের চরিত্র জেনে রাখা দরকার। এরা হচ্ছে আবদুল ওয়াহাব নজদী’র অনুসারি। তাদের ইসলাম হচ্ছে আবদুল ওয়াহাব নজদী ও ইয়াজিদের ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, তারা তাদের ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন সময় হিংস্র হয়। তারা ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, এটি একটি জঙ্গিবাদী ধর্ম। চাইলেই যে কারো হাত-পা ভাঙ্গা যায়, হত্যা করা যায়। তারা যে কথা বলে, তাদের যে আচরণ অন্য ধর্মের মানুষ ইসলামে আসা তো দূরের কথা তারা ভাবে, ইসলাম এমন হলে এই ধর্মে আসার দরকার নাই। জোর করে মানুষ হত্যা করে তারা তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের দায়িত্ব এসব জঙ্গিদের পাহারা দেয়া নয়। তারা এত দৃষ্টতা দেখানোর সাহস কোথায় পায়? নিরপেক্ষতার নামে প্রশাসনের নিরবতাকে আমরা ধিক্কার জানাই। শান্ত নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার দিকে এগিয়ে যাবেন না।
নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, রাসেল পার্ক জাতির জনকের ছোটপুত্রের নামে করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘৃনিত কুচক্রি মহল, যারা হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত, অপকর্মের সাথে জড়িত তারা সেই রাসেল পার্ক নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায় আর প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে। যারা কটুক্তি করেছে তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, তিনবার নির্বাচিত মেয়রকে হত্যা করতে চায়, নারায়ণগঞ্জের মা-বোনদের পতিতা হিসেবে আখ্যাতি করে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। এটি একটি স্বাধীন দেশ, এদেশের সংবিধান আছে। সংবিধান আমরা মানবো আর হেফাজত মানবে না। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেয়ার কথা বলার পরও প্রশাসন তোষামোদ করবে আর সমাবেশের অনুমতি দিবে। এ জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলম আজাদের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল কাজল, সাবেক সভাপতি ভবানি সংকর রায়, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, খেলাঘর আসর জেলা সভাপতি জাহিরুল ইসলাম, রথীন চক্রবর্তী, সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিল্পী সুমনা আক্তার প্রমুখ।