পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনা জেলা শহর থেকে ৫৬ কিমি দূরের একটি ছোট্ট কিন্তু সমৃদ্ধ উপজেলা ফরিদপুর। এই উপজেলাটি বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে অবহেলিত হলেও কৃষি, মৎস্য ও প্রানীসম্পদে সমৃদ্ধ। বাথান সমৃদ্ধ এই জনপদের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে খামার, তাই এই অঞ্চলের দুধ, ঘি আর দুগ্ধজাত খাবারের খ্যাতি দেশজুড়ে। চলনবিল সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় এখানে রয়েছে অনেক জলমহাল, মাছে ভরপুর বিস্তৃত বিল। কিন্তু এই দূরবর্তী এলাকার খ্যাতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অবৈধ ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে এখানে গড়ে তুলেছিলো অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল তৈরির কারখানা, নকল দুধ, ভেজাল ঘি, চিজ তৈরির ফ্যাক্টরি, ভেজাল গুড়সহ বিভিন্ন অবৈধ কারখানা। এসব কারখানার অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল, নকল দুধ, ভেজাল ঘি, গুড়, ছানাসহ বিভিন্ন ভেজাল পন্য ছড়িয়ে যেতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেসহ দেশের বাহিরেও। এখানকার অবৈধ দখলদাররা অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি, জলমহাল, বিল, নদী দখল করে অপরাধের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছিলো।
কিন্তু এসব অপরাধীর জন্য হঠাৎ আতংক রূপে হাজির হয়েছেন ফরিদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানাউল মোর্শেদ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আইনে ৯৬টি মোবাইল কোর্ট ও অসংখ্য অভিযানের মাধ্যমে ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২১৮ জনকে বিভিন্ন অর্থদণ্ড করে মোট প্রায় ৩১,২২,০০০/- টাকা অর্থদণ্ড আদায় করেন। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে মোবাইল কোর্ট ও অভিযানের মাধ্যমে কয়েকজনকে জেল ও জরিমানাসহ উপজেলার ডেমরা, রতনপুর, সোনাহারা এলাকার অনেকগুলো অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল তৈরির কারখানা থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের কয়েক হাজার মিটার চায়না দুয়ারী জাল জব্দ করে ধ্বংস করেন এবং কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে নকল দুধ, ভেজাল ঘি এবং নকল পন্য উৎপাদনে জড়িতদের কে জেল ও জরিমানার পাশাপাশি কারখানা সিলগালা করে দেন। মাদক আইন, ভূমি অপরাধ প্রতিকার আইনসহ বিভিন্নে আইনে এসব মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করে তিনি এ অঞ্চলের অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে আতংক হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়রা জানান গত ৫০ বছরে এ অঞ্চলে এত সাহসিকতা কোন অফিসার দেখায়নি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে এত অভিযানও কখনো হয়নি।
এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর তিনি পৌরসভার অকৃষি খাস জমি, বিভিন্ন খেলার মাঠের অবৈধ দখল, বিভিন্ন কৃষি খাস জমিসহ প্রায় ১৮ একরের উর্ধ্বে জমি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তার সাহসী পদক্ষেপে কয়েকটি খেলার মাঠ দখলমুক্ত হয়েছে, ফলে যুবসমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে দূরে সরে খেলামুখী হয়েছে। তিনি পৌরসভার ভিতরের একটি খাল অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খনন করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করার ফলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার নিরসন হয়েছে। পৌর এলাকার বনওয়ারিনগর বাজারে ফুটপাত ও তোহা বাজার দখলমুক্ত করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। ফলে দীর্ঘদিনের যানজটসহ অচলাবস্থা দূর হয়েছে। এছাড়া হাট পেরিফেরির মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫ বছরের বিশৃঙ্খলা দূর করে সরকারি খাস জায়গার ব্যবস্থাপনা এবং বকেয়া রাজস্ব ১৫ লক্ষ টাকা আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন।
তার কাজের গতির কারণে গত ১৫ মাসে ১২,০০০ (বার) হাজারের অধিক নামজারি ও বিবিধ কেস হয়রানিমুক্তভাবে এবং দ্রুত সময় নিষ্পত্তি হয়েছে।
তিনি প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ১৬,৩৩,০০০/- (ষোল লক্ষ তেত্রিশ হাজার) টাকা বকেয়া ভিপি লিজমানি আদায় করে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সহজ এবং জনবান্ধব করে তুলেছেন।
কর্মনিষ্ঠ ও নির্ভীক এই কর্মকর্তা একদিকে যেমন অবৈধ দখলদার আর কারবারিদের আতংক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে এক আস্থার নাম।
তিনি ভূমি সেবা, মোবাইল কোর্ট সহ বিভিন্ন ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফরিদপুর পৌরসভা ও পুঙ্গলি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
পৌরসভার নাগরিকদের জন্য তিনি আধুনিক ডিজিটাল সেবা প্রদানসহ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, সড়কবাতি ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, পার্ক নির্মাণ, খেলার মাঠ সংস্কার, আধুনিক টয়লেট, যানজট ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পৌরসভাকে ডিজিটাল রূপে গড়ে তুলেছেন।পৌর এলাকার বসবাসকারীরা জানান সানাউল মোর্শেদ পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যত উন্নয়ন করেছেন বিগত ৩০ বছরে এতো উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রম তারা পায়নি। প্রশাসক হিসেবে তিনি পৌরবাসীর কাছে হয়ে উঠেছেন এক জনআস্থার নাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে,সানাউল মোর্শেদ বলেন, আমি চাই এই অবহেলিত ফরিদপুর উপজেলা সর্ব দিক দিয়ে এগিয়ে থাক। আমার এই ভূমি সেবা পেতে যেন সাধারণ মানুষ কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেই দিকে আমার বিশেষ নজরদারি থাকবে সবসময়।
একইসাথে মোবাইল কোর্ট ও অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে সকল ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা হবে। তবে এখানে শুধু আমার একার পক্ষে এমন অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়।এখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সামাজের সকলের প্রচেষ্টায় এমন অপরাধ রোধ করা সম্ভব।

