সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত:
আমি যোগ্য প্রার্থী, আমাকে মনোনয়ন দেন। আমি সবসময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে বেড়াই, আমাকে মনোনয়ন দেন। আমি রাজনীতি করে অনেক ত্যাগ তীতিক্ষা করেছি সেই সাথে হামলা মামলা খেয়েছি, আমাকে মনোনয়ন দেন। ভাষ্যগুলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র ত্যাগী সব নেতাকর্মীদের।
অবশেষে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে কেউ পেয়েছে কেউ পায়নি। এই নিয়ে কেউ আত্নাবিশ্বাসের তুঙ্গে কারও আবার মন ভারী। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দলের পক্ষে জয়টা আমিই ছিনিয়ে আনবো। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি আমি কারও পক্ষে কাজ করবো না। এই ভাষ্যগুলোও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র ত্যাগী সব নেতাকর্মীদের। প্রয়োজনের সময় তারা সকলেই হাত তোলে। প্রয়োজন শেষে তাদের আর দেখা যায়না। যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচন থেকে ছিটকে যাওয়ার পর তাদের ভাষ্য নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি। আর সেই ভাষ্যগুলো শুধু মুখে মুখেই। নির্বাচনের পর মনোনয়ন প্রাপ্ত কাউকেই এখনো পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি। আর যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছে তারা তো শুরু থেকেই হারিয়ে গিয়েছে। এই কথাগুলো গত ৪ মাস আগে অর্থ্যাৎ ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন তথা ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের। সবসময় মুখে মুখে মিডিয়ার সামনে চোখের পানি ফেলে তারা বলে বেড়ায় তাদের মাতৃতুল্য মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায়। রক্তের বিনিময়ে হলেও তাকে মুক্ত করে আনবে তারা। কিন্তু কাজের বেলায় নেই কারও খোজ। এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।
নির্বাচন শেষ আজকে ৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। আপনারা জানিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি। এদিকে আপনাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আপনাদের সবসময়ের ভাষ্য এই সরকার অবৈধ সরকার এবং বিনা অপরাধে আপনাদের নেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। আপনাদের ভাষ্যর সাথে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের সাথে কোন মিল নেই। এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল। ভবিষ্যতে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আপনাদের পদক্ষেপ কী বা আপনারা কী করতে চাইছেন? এমন প্রশ্ন করা হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের।
নারায়ণগঞ্জ- ১ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ- ১ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিবাবক এড. তৈমূর আলম খন্দকারের ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেই আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করবো।
নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর বলেন, কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। পরবর্তীতে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে আমারা সেভাবেই কাজ করবো।
নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমরা তৃণমূলের কর্মী। আমরা সবসময় রাজপথে ছিলাম আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই সেই নির্দেশনা পালন করেছি। আমরা তৃণমূলের রাজপথের সৈনিক। আমরা মার খেতে জানি মার দিতেও জানি। জেল খাটতেও জানি জেলা খাটাতেও জানি। আমরা আমাদের দায়িত্ব থেকে কখনোই পিছপা হইনি ভবিষ্যতেও হবো না। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেই আমরা রাজপথে নামবো।
নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ। কিছু দিন আগে ভারত থেকে এসেছি। আমার মেরুদ্বন্ডে সমস্যা হয়েছিলো। ডাক্তার আমাকে তিন মাস বিশ্রামে থাকতে বলেছে।
নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত মুফতী মনির হোসাইন কাশেমী বলেন, আমরা শরীক দল হিসেবে যতটুকু করার করছি। যে পরিমাণ উৎসাহ দেয়ার আমরা দিচ্ছি। বিএনপি নিঃসন্দেহে একটি বড় দল। আমরা তাদের শরীক দল। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে। তারা সিদ্ধান্ত নিলে যা করা দরকার আমরা করবো। আমরা তাদের পাশে আছি এবং থাকবো। আশা করি সু’দিন আসবে।
নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত এস এম আকরামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালামের ফোন নাম্বার দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত থাকার কারণে তার সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সচেতন মহলের মতে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা শুধু প্রয়োজনের সময়ই মুখ খোলে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদের আর খোজঁ পাওয়া যায় না। রাজপথের আন্দোলন তো দূরে থাক তাদের নেত্রীর দাবিতে মুখও পর্যন্ত খুলতে দেখা যায় না। এই বিষয়গুলো তাদের জন্য লজ্জার।