সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
টাঙ্গাইল ও ঢাকার উত্তরা এলাকার প্রতারক সংগঠন “রাজা-বাদশা” গ্রুপের নতুন কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা ১) মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে বিজ্ঞানী সাইফুল ওরফে সায়েন্টিস্ট সাইফুল (৫৪)সহ ১৭ জনকে অস্ত্র ও মাদক সহ গ্রেফতার করেছে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ (উত্তরা)।
গত ১৫ জুন রাত পৌনে ১২ টায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপর আসামিরা হলেন মোছাঃ বকুলি ইয়াসমিন (৪৬) মোঃ ইমরান রাজা (২৫), মোছাঃ কাকুলী আক্তার (১৯), মোঃ রোমান বাদশা (১৮), মোঃ আনিসুজ্জামান সিদ্দীকী (৫৩), মোঃ নাজমুল হক (৩০), মোঃ তারেক আজিজ (৪০), মোঃ বেল্লাল হোসেন (৬১), মোঃ আব্দুল মান্নান (৫০), মোঃ শিমুল মিয়া (২৪), মোঃ নুরনবী (৪৫), মোঃ আবুল হাশেম (৪২), মোঃ আলী হোসেন (৩৮), মোঃ শওকত আলী (৫০), মোঃ রোকনুজ্জামান (৫০) । অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১ (এক)টি বিদেশী পিস্তল, ১ (এক)টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২ (দুই) বোতল বিদেশী মদ, ৬টি সীল, নগদ ৪৫ হাজার ৪৬০ টাকা, ২০টি মোবাইল ফোন, ১৪টি চেক বই, ১২টি ভিজিটিং কার্ড, ৬ টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চিঠি, বিভিন্ন মূল্যের ১২১টি জাল স্ট্যাম্প, ০৩টি চুক্তিনামা দলিল, ৩টি বই এবং ৯টি স্বাক্ষরিত চেক ও বিদেশী নেতৃবৃন্দের সাথে পত্রালাপের ভুয়া কপি।
গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম (৫৪) এই চক্রের মূল হোতা। সে “রাজা-বাদশা গ্রুপ” নামে একটি ভূয়া সংগঠন তৈরী করে ২০১১ সাল হতে প্রতারণার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সে উক্ত গ্রুপের চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দেয়। এই চক্রের সাথে তার পরিবারের সদস্যরাও অতোপ্রতভাবে জড়িত। তার স্ত্রী বকুলী ইয়াসমিন (৪৬), পূত্র মোঃ ইমরান রাজা (২৫) ও মোঃ রোমান বাদশা (১৮) এবং পূত্রবধূ মোছাঃ কাকুলী আক্তার (১৯) ভুয়া সংস্থাটির গুরুত্বপূর্র্ণ পদে রয়েছে বলে জানা যায়।
র্যাব জানান, গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম এর শিক্ষগত যোগ্যতা বিএসসি পাস। সে প্রথমে টিউশনি ও পরবর্তীতে পোল্ট্রি ফিড ব্যবসা সাথে জড়িত ছিল। সে দীর্ঘ ১০/১১ বছর যাবত বিভিন্ন প্রতারণার সাথে জড়িত। তার নামে বিভিন্ন থানায় ০৫টি প্রতারণার মামলা রয়েছে। সে নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করত। সে উল্লেখ করত যে, বিদেশে তার বিভিন্ন আবিষ্কার ও গবেষণা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিকার ও জ্বালানীবিহীন জেনারেটর দ্বারা পরিচালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট ও করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। সে ভিকটিমদের কাছে বিশ্বাস যোগ্যভাবে উপস্থাপন করত যে, করোনা প্রতিরোধে তার কয়েল টেকনিক পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সে আরও উল্লেখ করত, তার প্রজেক্ট সমূহের বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ সংক্রান্তে বিভিন্ন ভুয়া পত্রালাপগুলো সে উপস্থাপন করত। তার সাথে বিদেশী বিজ্ঞানী, গবেষক ও নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ রয়েছে বলে সে দাবী করত। যারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত রয়েছেন বলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে। ভিকটিমদের বিশ্বাসযোগ্যাতা অর্জন করাতে সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, তুরস্ক প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোগান ছাড়াও সৌদি আরবের তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাইপ্রাস ও জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর নাম উদ্ধৃত করে। এছাড়াও ইরাকের এক আইনজীবি তার উদ্ভাবিত প্রজেক্টে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। এভাবে সে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে প্রতারিত করত।
র্যাব আরও জানান,প্রতারক সংগঠনের মূল কার্যালয় উত্তরায় অবস্থিত (নবস্থাপিত)। এছাড়া টাঙ্গাইলের বেপারী পাড়ায় একটি শাখা রয়েছে। অফিসের ১৫ জন সহযোগী কর্মরত; এছাড়া মাঠ পর্যায়ে আরও ৩০ জনের অধিক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের এজেন্টরা প্রাথমিক আলোচনা করে টার্গেট নির্ধারণ করত। অতঃপর গ্রুপ/কোম্পানী চেয়ারম্যান সাইফুলের সাথে সাক্ষাত করাত। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইফুল ভিকটিমদের বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদে ফেলত।
ভিকটিমদেরকে মূলত গ্রেফতারকৃত সাইফুল স্ব-উদ্ভাবিত প্রজেক্টসমূহের অর্থ বিনিয়োগে ২৫ হাজার হলে কোটি টাকার অফার এবং জমি প্রদানে প্রজেক্টের মালিকানা শেয়ার অফার দিত। স্বল্প শিক্ষিত ধনী ব্যবসায়ী ও জমিজমা সম্পত্তির মালিকদের সে টার্গেট করত।
ইতিমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রজেক্ট এর আওতায় নোয়াখালীতে প্রায় ৪৫০ বিঘা জমি ছাড়াও লক্ষীপুর, রাজশাহী এবং ময়মনসিংয়ের ভালুকায় আরোও সহস্রাধিক বিঘা জমি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি এলাকায়ও জমি জালিয়াতি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে সে জানায়। প্রায় কয়েক শতাধিক ভিকটিম তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।