আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশী বাধাঁয় গণসংহতির কোটা আন্দোলন কর্মসূচি পন্ড

পুলিশী বাধাঁয় গণসংহতি

পুলিশী বাধাঁয় গণসংহতি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জে গণসংহতি আন্দোলনের পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের উপর সন্ত্রাসী হামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে বুধবার (৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানবন্ধন হবার কথা ছিল। পরবর্তীতে পুলিশী বাধায় মানববন্ধন পন্ড হয়ে গেলে প্রেস ক্লাবের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
বিকেল ৪টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকলে বাধা দেয় পুলিশ। মানববন্ধনে আসা নেতাকর্মীদের প্রেস ক্লাবের সামনে দাড়াতে নিষেধ করা হয়। লিখিত কোন অনুমতি ছাড়া কোন মানববন্ধন কিংবা সভা সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানায় পুলিশ। কোটা সংস্কারের সাথে সম্পৃক্ত কোন প্রকার কর্মসূচিতে সরকারের নিষেধজ্ঞা আছে বলেও জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার বের করে নেতাকর্মীরা দাড়াতে চাইলে নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশীর এক প্রকার ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় পুলিশ ব্যানার কেড়ে নেয় এবং কোন প্রকার কর্মসূচি করা যাবে না বলে জানায়। পুলিশ মানববন্ধন করতে বাধা দিলে মানববন্ধনে আগত নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, প্রবীন সাংবাদিক অহিদুল হক খান, সমগীতের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল আকাশ, ছড়াকার আহমেদ বাবলু, নারী নেত্রী পপি রানী সরকার, ছাত্রনেতা মশিউর রহমান রিচার্ড ও অভিভাবক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
এ সময় সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সরকার কতোটা অসহিষ্ণু হলে পরে একটি নিরব শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকেও তারা সহ্য করতে পারে না। কোটা সংস্কার নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে যে আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার বর্বর ও নৃশংস পথ বেছে নিয়েছে। তাদের নিজস্ব দলদাসদের মধ্য দিয়ে, পুলিশ বাহিনীর মধ্য দিয়ে এই নৃশংসতা চালাচ্ছে সরকার। আমি এর নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। এই আক্রমনের প্রতিবাদ যে অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষরা করছে তাদেরও সহ্য করতে পারছে না সরকার। এর অর্থটা কি? এর অর্থ হচ্ছে, সরকার যতোটাই জোরে কথা বলুক না কেন, তাদের পায়ের তলার মাটি নড়বড়ে। সেজন্য সরকার মাইকের গর্জন তো দূরের কথা একটা ফিসফিসও সহ্য করতে পারে না।’
রফিউর রাব্বি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, কোটা বাতিল করা হবে। এতে আশ্বস্ত হয়ে সকল শিক্ষার্থীরা ঘরমুখো হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুখো হলো। এরপর মন্ত্রীরা বিভিন্ন কথা বলতে লাগলেন, কালক্ষেপন করতে লাগলেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বললেন, এটা সময়ের ব্যাপার, এটার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মন্ত্রী পরিষদের কমিটিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিবেন। যখন একজন রাষ্ট্রপ্রধান কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করে, প্রতারণার আশ্রয় নেয় তখন আমাদের দেশের সন্তানরা তাদের প্রতি আর কি বিশ্বাস রাখবে। মিথ্যা, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তারা কি দেশ চালাবে, দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে। আমরা আজকের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ ৭১’এ যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কিন্তু সরকার এটাকে পুলিশ প্রজাতন্ত্রের একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’

 

পুলিশী বাধাঁয় গণসংহতি

নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষন আগে পুলিশ আমাদের দাড়াতে দেয় নি। আমরা মনে করি, ১৯৭২ সালের সংবিধানকে বাংলাদেশ সরকার ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লঙ্ঘন করেছে। আমি সকলকে আহ্বান করবো সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য মাঠে নামতে। কোটা পদ্ধতি আজকের সময়ে প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ১৯৭১ সালে সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, অনেকগুলো বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পক্ষ ছাড়া সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। যদি সরকার ৭২’এর সংবিধান মানে তাহলে অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী পুলিশের এই হামলা বর্বরোচিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
প্রবীন সাংবাদিক অহিদুল হক খান বলেন, ‘আমি একজন অভিভাবক। আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ছে। যখন কোটা সংস্কারের মতো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রদেরকে মারা হয় তখন আমি আমার সন্তানকে দেখি সেখানে। আমি দেখি আমার সন্তান মার খাচ্ছে। আমার সন্তানও ভাবে, যারা মার খাচ্ছে তারা অন্যদের থেকে ভিন্ন। তারা সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদেরকে সে ভাই হিসেবে মনে করে। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুন্ডারা ছাত্রদেরকে মারে তখন সে ভাবে তার ভাই মার খাচ্ছে। সেও এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়।’
সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে একটি কথা বলা যায় না। যখন নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারকে সংহতি জানিয়ে আন্দোলন হচ্ছিল তখন কোটা সংস্কারের কারণে তোলারাম কলেজে সাংবাদিককে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। বিভিন্নভাবে দেশের মানুষের মেধার বিকাশে বাধা দিচ্ছে সরকার। কোটা বাতিলের কথা বলে আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রজ্ঞাপন জারি করছে না সরকার। যারাই এই বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছে তাদেরকে জামাত-শিবিরের ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। আমাদের শন্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়েছে। লাগানো মাইক খুলে ফেলতে হয়েছে। ব্যানার ছিনিয়ে নিয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। সরকার ভাবছে এই ক্ষমতার মসনদ আজীবন টিকিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস বলে দেয় ক্ষমতা চিরদিন থাকে না। স্বৈরাচার বেশিদিন টিকে থাকে না।’