সংবাদচর্চা রিপোর্ট
কখনও ছোট ভাই কখনও শিষ্য বলে সম্বোধন করলেও শ্রমিক নেতা কাওসার আহম্মেদ পলাশকে এখন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবেন শামীম ওসমান। তাই সুযোগ পেলেই তাকে এক হাত নেন এই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। সম্প্রতি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পলাশকে চাঁদাবাজ প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি। রাজনীতি বোদ্ধাদের মতে, ছাত্র রাজনীতি খেকে শ্রমিক রাজনীতি করায় পলাশের অনেক অনুসারী তৈরী হয়েছে। আর এতেই ভয় পান শামীম ওসমান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাতীয় শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পলাশ। বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পলাশের আলীগঞ্জের বাড়িতে আসেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। খবরটি কানে যায় শামীম ওসমানের। তিনিও দ্রুত পলাশের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর গুঞ্জন উঠে, পলাশ মনোনয়ন পেতে পারেন। এ নিয়ে অনুগত নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। পলাশের মনোনয়ন গুঞ্জন বিষয়ে একটি সভায় জানতে চান ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীসহ কয়েকজন। জবাবে শামীম ওসমান বলেন, পলাশকে নিয়ে সমস্যা নেই। ও আমার ছোট ভাই।
সূত্র মতে, এক সময় শামীম ওসমানের অনুগত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়েই শুরু করেছিলেন পলাশ। পরে তিনি শ্রমিকলীগের রাজনীতি করে কেন্দ্রে জায়গা করে নেন। এছাড়া এক সময়ে অধ্যাপিকা নাজমা রহমানের বলয়ে ছিলেন পলাশ। এ থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু হয় শামীম ওসমানের সাথে। রাজনীতি সচেতন মহলের মতে, প্রথমদিকে পলাশকে তেমন পাত্তা দিতেননা শামীম বলয়। তবে দিনে দিনে পলাশের অনেক অনুগত হলে বিষয়টি নজরে পরে তাদের। এখন তারা পলাশকে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করেন। আর এ কারনেই যখন সুযোগ পান তখনই পলাশকে ইঙ্গিত করে সমালোচনা করতে দেখা যায় শামীম ওসমানকে।
রোববার সংসদেও ইঙ্গিতে পলাশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেছেন, আমার এলাকায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি কোয়ার্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে একটি খেলার মাঠ আছে। মাঠটি সংরক্ষনের অনুরোধ করেছিলাম তা রেখেছে। খেলার মাঠের জন্য ১২ কোটি টাকা অনুদানও হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সেখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছিলো সেখানে একটি গোষ্ঠি চাঁদা আদায় করছে। ওয়াকওয়ে পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেলেছে। সেখানে খেলার মাঠের নাম করে চাঁদা আদায় করছে। সেখানে তিন বছর ধরে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে । যারা টেন্ডার নিয়েছে তারা চাঁদাবাজির জন্য কাজ করতে পারছে না। সেখানে প্রতিদিন ৪/৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয়। তিনি এ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলীগঞ্জে একটি মাঠ রক্ষায় আন্দোলন করছেন শ্রমিকনেতা পলাশ। ওই মাঠে তার ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। এ মাঠ রক্ষায় জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সহমত প্রকাশ করেছে। এখানে এসেছেন জাতীয় ফুটবল ও ক্রিকেট টিমের তারকা খেলোয়াররা। তারাও মাঠ রক্ষার পক্ষে কথা বলেছেন। তবে ওই মাঠ বিআইডব্লিউটিএ স্টাফ কোয়ার্টার করবে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে আদালতে মামলাও আছে। এ মাঠ রক্ষায় পলাশ আন্দোলন করলেও শামীম ওসমান অবস্থান নিয়েছেন ঠিকাদারের পক্ষে। তবে বিভিন্ন মহলের আন্দোলনের কারনে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করলেন। তবে তিনি কোন চাঁদাবাজের নাম উল্লেখ করেননি। সচেতন মহলের মতে, এখানে পলাশের বিরোধিতাই মূখ্য।