আজ বুধবার, ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লালমনিরহাটে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্ব অবহেলায় ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের

লালমনিরহাটে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্ব অবহেলায় ভুল প্রশ্নে পরীক্ষাপরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের

হাসান মাহমুদ ,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্বে অবহেলার কারনে ১৬ জন পরীক্ষার্থীর ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ১৬ জন পরিক্ষর্থীর ফলাফল ও ভবিৎষত অনিশ্চিতায় বলে অভিযোগ করেছেন ওই পরীক্ষার্থী ও অবিভাবকরা ।
কেন্দ্র সচিবের এমন অবহেলায় ভুল প্রশ্নে পরিক্ষা নেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার আরএমপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয় নছর উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের ০৯ জন এবং চাপারহাটসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ০৭ জন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, গত ১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার শুরুতে ওই ১৬ জন শিক্ষার্থীকে ২০১৬ সালের (অনিয়মিত) সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। এ নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট কক্ষ পরিদর্শককে বিষয়টি জানালে তারা কেন্দ্র সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেন। তবে এতে কোন পাত্তা না দিয়ে কেন্দ্র সচিব ধমক দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন।

এদিকে একই ভাবে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষাও ২০১৬ সালের (অনিয়মিত) সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারী শারিরীক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা ও ৫ ফেব্রুয়ারী ইংরেজী ১ম পত্রের পরীক্ষা ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পাশাপাশি ফলাফল নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিশ্চুক একজন শিক্ষক জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডর সার্কুলার অনুযায়ী যারা ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ফরমপূরণ করেননি তারা ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় দিতে ইচ্ছুক হলে ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে হবে। সে অনুয়ায়ী ওই সব শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আসছে।

কিন্তু তুষভান্ডার আর এম এম পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব নলিনী কান্ত রায় বোর্ডের নিয়ম তোয়াক্কা না করে ওই সব শিক্ষার্থীদের দুইটি পরীক্ষা ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে জয়শ্রী রায়, স্বপ্না রাণী, ঝরনা একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, আমরা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিব ধমক দিয়ে ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুযায়ী সরবরাহকৃত প্রশপত্রে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন। পরে আমরা বিষয়টি আমাদের প্রধান শিক্ষককে জানালে পরবর্তী দুইটি পরীক্ষা ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। ফলে আমাদের পরীক্ষা খারাপ হয় এবং পাশ করতে পারব না।

তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক বহুলুল ইসলাম জানান, আমার ০৯ জন শিক্ষার্থী ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পড়ালেখা করেছে। এখন ২০১৬ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ায় পরীক্ষার ফলাফল ভাল হবে না। এতে বিদ্যালয়ের পাশের হার কমে যাবে অপরদিকে ওই শিক্ষার্থীদের একটি বছর শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এর দায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিব ও কক্ষ পরিদর্শক কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না।

এ ব্যাপারে তুষভান্ডার আর এম এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব নলিনী কান্ত বায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের দোষ এড়িয়ে পরিদর্শকদের গাফিলাতির কথা জানিয়ে বলেন, আমি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র নেয়ার জন্য থানায় যাই না। আমার হয়ে লোক পাঠানো হয়। ওই দিনের পরীক্ষার দায়িত্বরত পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই দায়ি। এ জন্য তিনি ৪ জন পরিদর্শককে দায়িত্ব অবহেলার কারনে অব্যাহতি দিয়েছেন।

এদিকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে আনা ও খোলার কাজে কেন্দ্র সচিব না করে কেন প্রতিনিধি পাঠালেন এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি এর কোন সাদুত্তর না দিয়ে অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে যান।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,‘ প্রশ্ন পত্র কেন্দ্রে আনা, পরিবহন, খোলা ও বন্টন এসব কাজে কেন্দ্র সচিবকে থাকতে হবে।’ সচিব নিজেই প্রশ্নপত্র গ্রহন না করে পরিপত্র লংঘন করেছেন। আর তার খেসারত হিসেবে ১৬ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত অন্ধকারে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কমিটির সভাপতি মোঃ রবিউল হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডকে জানানো হয়েছে।