সংবাদচর্চা রিপোর্ট
ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন নিয়ন্ত্রণহীন হারে পরিত্যাক্ত বর্জ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই বর্জ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো পরিকল্পনাহীনভাবে ব্যবস্থাপনার নামে যেখানে সেখানে রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে দেখার বিষয় হলো এই শহরের প্রবেশের যে সড়কটি রয়েছে তার শুরুতে জালকুড়ি এলাকায় বিশাল ময়লার স্তুপ।
বাইরের যে কোন শহর থেকে শহরে প্রবেশ করলে তার মনে হবে যেন ময়লার শহরে প্রবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জকে ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক শহর বলে অনেকে উপস্থাপন করলেও প্রকৃতপক্ষে ভ্রমনকারীরা নারায়ণগঞ্জকে ময়লার শহর হিসেবে চিহ্নিত করছে। অনেকে এই শহরকে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ হিসেবেও অনেকে মনে করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও উপজেলার ফতুল্লা এলাকায় মানুষের বসবাস বেশি। সরকারের সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের অবহেলায় জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্জ্যরে ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, মশা মাছি বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষন, বন্য প্রানীর জীবনাবসানসহ নানাভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরসহ নানা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন অগনিত টন বর্জ্য পানিতে, পতিত ভূমিতে, রাস্তার পাশে, খালে, বিলে, নদীতে, খেলার মাঠে, বাড়ির পাশে, ময়দানে, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচ্ছন্ন বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগের আওতায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা প্রতিটি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের চাহিদা মতো অর্থ আদায় করছে। তবে সেই বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। এত লোকবল ব্যবহার করেও প্রতিষ্ঠানটি শহরবাসীর কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ (ইটিপি), বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, প্লাষ্টিক ইত্যাদি তৈরীসহ নানা পরিকল্পনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোন কাজই দৃশ্যমান হয় নি। কতটুকু কাজ সম্পন্ন হয়েছে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেন, সব বিষয়ে আমাকে ফোন করতে হবে কেন? বিভাগ আছে সেই বিভাগগুলোতে যোগাযোগ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএফএম এহতেশামুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। প্রধান সমাজ কল্যান ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা একেএম ফরিদুল মিরাজের ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন জবাব পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে নগর পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, জালকুড়িতে আমাদের কোন ময়লা যায় না। তবে ইউনিয়নগুলোর ময়লা ফেলা হচ্ছে। আমরা এখন শহীদ নগরে ময়লা ফেলছি। রাস্তার পাশে যেসব ময়লা ফেলা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আমরা প্রতিদিনই কাজ করছি।
জানতে চাইলে পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক শ্যামল পাল বলেন, আমি কার্যালয়ের বাইরে আছি। পুরো বিষয়টি কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।
আরও জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বর্তমানে চলছে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়েন। উভয় পক্ষই একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে দায়সারা কাজ করছে। এ নিয়ে গত বছর উভয় দপ্তরের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সিটি কর্পোরেশনকে জেলা প্রশাসন শহীদনগর এলাকায় ময়লা ফেলতে বাধা দিলে ময়লার গাড়ি জেলা প্রশাসকের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে রেখে সাধারন জনগনের চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ওই দুই দপ্তর। সমালোচনার ঝড়ে সাধারন মানুষ তাদের শিক্ষা, সভ্যতাসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল বারী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের দায়িত্ব রয়েছে। উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে লোকবলের অভাব রয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশনে লোকবল রয়েছে প্রচুর। তবে জেলা সৌন্দর্য্য নষ্ট হলে বা কারো ক্ষতি হলে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। আগের বিষয়ের কারনে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তবে পুরো জেলার বর্জ্যে সঠিক সমাধান বা সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। তবেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।