শহিদুল ইসলাম লিখন
পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মা পাড়ের গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। যে চরাঞ্চল ছিল জনবিচ্ছিন্ন, ছিলো না বিদ্যুৎ। সেই জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল শিবচরসহ গোটা মাদারীপুর জুড়ে চলছে দেশের মেগা সব প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। বদলে যাবে দেশের অর্থসামাজিক চিত্র। শুধু পদ্মাসেতুর কাজই এগিয়ে চলছে না, সাথে সেতুকে ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার মানও পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। হাতে নেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প। দক্ষিণের জেলা মাদারীপুরে এসব মেগা প্রকল্পের জন্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার একর জমি। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এতে আশান্বিত সাধারণ মানুষ, দুঃখ ঘুচবে নিন্মঞ্চলের মানুষের। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি ক্রয় করছে বিভিন্ন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে করে এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে এসব প্রকল্প ঘিরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের কুতুবপুরে ৭০ একর জায়াগায় দেশের প্রথম ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একই ইউনিয়নে ১০৮ একর জমিতে বেনারসি পল্লী নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহনে ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। পরিকল্পিত শহরায়নের জন্য ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে শিবচরে। এখানে দাদাভাই উপশহর নামে পরিকল্পিত শহরায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। এছাড়া বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে ৮ কিলোমিটার লম্বা ও ৫ কিলোমিটার প্রস্থের আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। চরাঞ্চলের চরজানাজাতে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চরজানাজাতে এক হাজার একর জমিতে মাটি ভরাট করা হচ্ছে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে। সেখানে ৭টি স্টেডিয়াম থাকবে বলে জানা গেছে। এসব স্টেডিয়ামগুলো হবে আন্তর্জাতিক মানের। সকল সুযোগ সুবিধা থাকবে এ স্টেডিয়ামগুলোতে। পাশেই ১২ শ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারন করেছে গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক হচ্ছে পদ্মাসেতুকে ঘিরেই। পদ্মাসেতুর দুই পাড়ে ৫৫ কিলোমিটার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চারলেন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি স্থানীয় যানবাহনের জন্য নির্মাণ করা হবে আরো দুই লেন সড়ক। এতে প্রতি কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ ব্যয় হবে ১০৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। দ্রুত গতিতে এই সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে জন্য যাত্রাবাড়ি উড়াল সেতুর ঢাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মার দক্ষিণপারের মাদারীপুরের শিবচর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মোট ৫৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চারলেন বিশিষ্ট দেশের প্রথম এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এর মধ্যে পদ্মার উত্তরপাড়ে ২৫কিলোমিটার এবং পদ্মার দক্ষিণপাড়ের মাদারীপুরের শিবচরে ৯ কিলোমিটার এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ২১ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া এই সেতুকে ঘিরে ফরিদপুর থেকে মাদারীপুর হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা পর্যন্ত ফোরলেন রাস্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে বাংলাাদশে সরকাররে নিজস্ব র্অথায়নে এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সড়কের ব্যবহার করে মেট্রোরেল নির্মাণের পরকিল্পনার রয়েছে সরকারের। পদ্মাসেতুর কাজের সাথে সাথেই সম্পন্ন হবে এই সড়কের কাজ। পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া, পুর্ন:বাসন প্রকল্প নির্মাণ শেষে মূল সেতুর কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এছাড়া মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় ইকোনোমিক জোন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলমান রয়েছে।
মাদারীপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারী উদ্যেগে বিভিন্ন কলকারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে এসব প্রকল্প ঘিরে। তবে আমাদের এই অঞ্চলে গ্যাসের সংযোগ নেই। গ্যাসের সংযোগ না থাকলে কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবী উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সাথেই যেন গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্যে ২০১২ থেকে এই পর্যন্ত নানা সময়ে প্রায় ৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামীতে এসব প্রকল্প চলমান থাকলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে মাদারীপুর। বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।’
মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়াজউদ্দিন খান বলেন, ‘সেতুকে ঘিরে চলমান মেঘা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে। এখান থেকে মংলা বন্দর এবং পায়রা বন্দরের নিকটে হওয়ায় গড়ে উঠবে কলকারখানা। বাড়বে কর্মসংস্থান। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র।’