আজ বুধবার, ১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নড়েনি টার্গেট

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

প্রভাবশালী হওয়া সত্তেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নিয়ে কিছুটা হতাশা রয়েছে ওসমান বলয়ে। প্রথমে মেয়র পদে পরাজয়, পরে পছন্দের ব্যক্তির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্দ তারা। এরইমধ্যে আগামী নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে কিঞ্চিত রাজনীতি শুরু হয়েছে। এবারও সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ঠেকানোর একটা চেষ্টা অব্যহত থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন গঠনে শামীম ওসমানের অবদান আছে দাবি করে তার অনুগতরা বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে রাতের আঁধারে ষড়যন্ত্র না হলে শামীম ওসমানই জিততেন। তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা একাট্টা হয়ে তাদের নেতাকে হারিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থন শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিলো বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেই বেছে নেবে আওয়ামী লীগ। তবে শেষতক তা হয়নি। দলের সমর্থন না পেলেও নাগরিক সমাজের ব্যাণারে আইভী প্রার্থী হয়। ওই সময়ে তার পাশে জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এসএম আকরাম সহ অনেক নেতাকেই দেখা গেছে। একই নির্বাচনে বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকারকে সমর্থন দেয়। তিনজন প্রার্থীই নির্বাচনের আগের রাত পর্যন্ত সমানতালে প্রচারণা চালিয়েছিলো। মাঝ রাতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের নির্দেশে ভোটাভুটি থেকে সরে যায় তৈমূর আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় সে সময়ে তৈমূর বলেছিলেন, ‘কোরবানীর আগেই আমাকে কোরবানী করা হয়েছে’।

তৈমূর কোরবানী হওয়ার কথা বললেও শামীম ওসমান এভাবে বলেননি। তবে তার বলয়ের দাবি, নির্বাচনের আগের রাতে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা, জামায়াত নেতা মিলে ষড়যন্ত্র করেছে। তারাই তৈমূরকে ভোটাভুটি থেকে সরিয়ে দিয়ে আইভীর পথ পরিস্কার করেছেন। তবে তাদের এ দাবি মানতে নারাজ আইভী পন্থিরা। তাদের মতে, সাধারণ মানুষ অনেক দিন পর আইভীর মাঝে নিজেদের সাহস খুঁজে পেয়েছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলায় আইভীকে তারা আপন করে নিয়েছেন।

২০১৬ সালের নির্বাচন দলীয় মনোনয়ন ভিত্তিক হয়। আগেরবার সমর্থন না দিলেও এবার আইভীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের যে তালিকা পাঠিয়েছিলো তাতে আইভীর নাম ছিলো না। আইভী সমর্থকদের দাবি, শামীম ওসমান চাননি বলেই তালিকায় আইভীর নাম ছিলো না। তবে শামীম ওসমান সে সময়ে বলেছিলেন, সভায় একটা লোক যদি আইভীর কথা বলতো তো আমি সমর্থন দিতাম।  এ কথায় তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আইভীকে চাননি বলেই তারা বা তিনি সমর্থন দিতে পারেননি। সে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে কয়েকজন নেতাকে ডেকে ঢাকায় নেয় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই আইভীকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয় এবং দলের সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে বলা হয়।

নির্বাচনে আইভীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে শামীম ওসমান অনুসারীদের। তার অনুগত অনেকে মাঠে প্রচার প্রচারণায় ছিলেন। যদিও বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে অর্থ দিয়ে সহযোগীতা করার একটা অভিযোগ বিএনপির এক নেতা করেছিলেন। মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রকাশ্যে বলেছিলেন, সাখাওয়াত ওসমান পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সাখাওয়াত এর প্রতিবাদ করলেও ওসমান পরিবারের কেউ কোন টু শব্দ করেনি।

এদিকে আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে একটা সুর বাজতে শুরু করেছে বলে মনে করেন রাজনীতি সচেতন মহল। করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও তা থেমে নেই। আইভীকে মাইনাস করার নানা রকম চেষ্টা চলছে। সূত্র মতে, প্রথমে দলের মনোনয়নের দিকে নজর দিবে আইভী বিরোধীরা। চেষ্টা করা হবে যাতে তিনি দলের মনোনয়ন না পান। তা না পারলে জনপ্রিয় কাউকে আইভীর প্রতিদ্ব›িদ্ব হিসেবে প্রার্থী করা হবে। তা হতে পারে দলের ভিতর কিংবা দলের বাইরে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ কে নিয়ে এরকম কথাবার্তা উঠেছে। যদিও খোরশেদ তা বলেননি। তবে শোনা যাচ্ছে, করোনা যোদ্ধার সুনাম কুঁড়ানোর পর খোরশেদের প্রতি কিছুটা আন্তরিক হয়েছে ওসমান পরিবার। এদিকে পরিবারের মধ্য থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও সালমা ওসমান লিপি তা হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। পরিবারের কোন নারী সদস্য নির্বাচন করুক তা নিয়ে সেলিম ওসমানের বারণ থাকায় আপাতত সেদিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে,  প্রার্থী যেই হউক সিটি নির্বাচন নিয়ে আইভী বিরোধীদের টার্গেট আগের জায়গায়ই আছে। আইভী যাতে দলের মনোনয়ন না পান সেদিকটায়ই প্রথম নজর তাদের। এরপর পেয়ে গেলেও টার্গেট টু ফর্মুলায় নামবে তারা।