নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই এবার নৌকার প্রার্থী থাকছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার একটি নির্দেশের কারনেই এমনটা মনে করছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ প্রদান করেছেন, যে সকল সংসদ সদস্য নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছে বা নৌকার পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের একটি সুত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরাজয়ের জন্য তাদের দায়ী করে তৃনমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ দেয়ায় কপাল পুড়তে যাচ্ছে এবার এই জেলার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের।
গত দুইবারের সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে দুইটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হলেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই জেলার আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া নাও হতে পারে বলে জানা গেছে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সুত্র জানায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল জোটগত প্রার্থী বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনায়, বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের দাবি ও স্থানীয় নির্বাচনে দল ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব নেতা ও সংসদ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন, তাদের ভবিষ্যতে নৌকা বা জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সুত্রটি জানায়, গত ১লা এপ্রিল (শনিবার) সন্ধ্যায় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গ্রুপিং-লবিংয়ে জড়িত নেতা, স্থানীয় নির্বাচনে দল ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব নেতা ও সংসদ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সুত্রটি আরও জানায়, গণভবনে অনুষ্ঠিত গত ১লা এপ্রিল শনিবারের সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলের সর্বস্তরে কোন্দল ও বিদ্রোহের মাত্রা বেড়েছে। ফলে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যায়। এবং স্থানীয় অনেক সংসদ সদস্যরা আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করে। এজন্য ভরাডুবি হয় দলের সমর্থিত প্রার্থীদের। এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
দলীয় ও জোটের যে সকল সংসদ সদস্য নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সুত্রটি জানায়, নারায়ণগঞ্জে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলা ও সোনারগাঁয় আওয়ামীলীগ সর্মথিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের পরাজয়ের কারন হিসেবে অইসব এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরসহ দলের বিভিন্ন কমিটির সাথে আলাপ আলোচনা করে বিগত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ জানতে চান।
সুত্রটি জানায়, এর কারণ সম্পর্কে সাংগঠনিক সম্পাদককে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব বিস্তার করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছে। দলীয় প্রতিকে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর এবং সোনারগাঁ আসনের ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিতরা সবাই লাঙ্গল সমর্থিত। আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও শুধু মাত্র এমপিদের প্রভাবের কারনে পরাজিত হয়েছে নৌকা। শুধু পরাজিতই না, নৌকার নির্বাচন করতে গিয়ে পুলিশ ও জাপা ক্যাডারদের হাতে পিটুনীর শিকার হতে হয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের।